নদীয়া জেলার রিভার ডিভিশনের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের একজন অফিসার মি. ভিভিয়ান ও একজন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার সুরেন্দ্র বরাট এই প্রাসাদ নির্মাণের কাজ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন।
সামনে সুদৃশ্য রেলিং দিয়ে ঘেরা এক মনোরম উদ্যান এবং মূল প্রবেশ পথে লোহার তৈরি নর্মান আর্চওয়ে এক ধরনের সুবিশাল তোরণ।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে উপরের তলাটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মুর্শিদাবাদের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি মসজিদ ও সরফরাজ খাঁর ফুটি মসজিদ।
পরে এটি মেরামত করা হলেও তিনতলা আর নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে এটি দোতলা একটি ভবন। উত্তর দিকে কৃত্রিম পাহাড় ও বাগান (ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেন) ছিলো যা আজ আর নেই। প্রাসাদের সামনেই ভাগীরথী নদী।
ওয়াসিফ আলী মির্জ্জা খান বাহাদুর জন্ম নেন ০৭ জানুয়ারি ১৮৭৫ ও মৃত্যু হয় ২৩ অক্টোবর ১৯৫৯ সালে। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে আমৃত্যু তিনি মুর্শিদাবাদের নবাব ছিলেন। এর পর তার ছেলে ওয়ারিস আলী মির্জ্জা ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত নবাব ছিলেন। এরপর মুর্শিদাবাদে আরও দুইজন নবাব ছিলেন। বর্তমান নবাব আব্বাস আলী মির্জ্জা। ওয়ারিস আলীর পর নবাবির উত্তরাধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার প্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নবাবের পদ খালি ছিলো। ২০১৪ সালে মামলার রায়ে আব্বাস আলীকে নবাব ঘোষণা দেওয়া হয়।
পলাশীর পরাজয়ের পর সবাই নবাব হয়েছেন ইংরেজদের অনুকম্পায়। এরা সবাই ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও পরে ব্রিটিশ রাজের বেতনভুক্ত কর্মচারী বিশেষ। নবাবের মসনদের শোভাবর্ধনই ছিলো এদের কাজ। নবাবরা ছিলেন সবাই টাইটুলার বা নাম-সর্বস্ব। এই সব নাম-সর্বস্ব নবাবরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আর ‘নবাব বাহাদুর’ খানবাহাদুর’, ‘স্যার’ ইত্যাদি খেতাব পেয়েই খুশি থাকতেন। ওয়াসিফ আলী মির্জ্জাকে যেমন ‘স্যার’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
সিরাজ-উদ-দৌলার পরে মীরজাফরের মাধ্যমে নাজাফি রাজবংশের সূচনা। মুর্শিদাবাদের পরবর্তী নবাবরা সেই মীর জাফর আলী খাঁরই উত্তরাধিকার।
বর্তমানে এই প্রাসাদের নিচতলায় মুর্শিদাবাদ এস্টেট ম্যানেজারের কাছারি ও উপরে ম্যানেজার সাহেবের বাসস্থান। এর অভ্যন্তরে শ্বেত পাথরের সিঁড়ি ও সুদৃশ্য মর্ম্মরমূর্তিগুলো আজো রয়েছো। তবে সে চাকচিক্য আর নেই। মার্বেল পাথরে বাঁধানো সিঁড়ি এই প্রাসাদের অন্যতম দর্শনীয় বিষয় ছিলো যা প্রাসাদের জাকজমক আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ। কিন্তু সেও আজ ম্লান। পাথরের কয়েকটি মূর্তি নির্বাক দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের অনেক জানা-অজানার সাক্ষী হয়ে। হয়তো ওরা কোনোদিনই মুখ খুলবে না...।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এসএনএস
আগের পর্ব পড়ুন:
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ
** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে
** ৭ম পর্ব: কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম
** ৮ম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর কলিজাখেকো মেয়ের সমাধি!
** ৯ম পর্ব: হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ
** ১০ম পর্ব: মুজিবনগর ও পলাশী: বাংলার ইতিহাসের দুই আম্রকানন
** ১১তম পর্ব: ৩শ বছরের ডাচ সিমেট্রি ও যোগেন্দ্র নারায়ণের মন্দির
** ১২তম পর্ব: সতীদাহ ঘাটের পাতালেশ্বর মন্দির
** ১৩তম পর্ব : আশি টাকার গাড়ি ও সোনার রথ
** ১৪তম পর্ব : ষড়যন্ত্রের গ্রিনরুম ছিল কাসিম বাজার
** ১৫তম পর্ব: কাসিম বাজার ছোট রাজবাড়ির বড় আয়োজন
** ১৬তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর জগৎজয়ী কামান
** ১৭তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি
** ১৮তম পর্ব: ফুটি মসজিদ: নির্মাণের অপেক্ষায় ৩শ বছর
** ১৯তম পর্ব: রোশনিবাগে শুয়ে আছেন নবাব সুজাউদ্দিন