ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য! শিলাইদহের কুঠিবাড়ি/ ছবি: বাংলানিউজ

শিলাইদহ (কুষ্টিয়া) থেকে ফিরে: “ওগো তুমি কোথা যাও, কোন বিদেশে/ বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।” সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের বেশিরভাগ কবিতায় পদ্মাপাড়ের পল্লিপ্রকৃতি, মানুষের সুখদুঃখ-জীবনধারার গভীর সম্পর্ক।

শিলাইদহের কুঠিবাড়ির দিনগুলো প্রসঙ্গে সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেন, “আমার বুদ্ধি এবং কল্পনা এবং ইচ্ছাকে উন্মুখ করে তুলেছিল এই সময়কার প্রবর্তনা— বিশ্বপ্রকৃতি এবং মানবলোকের মধ্যে নিত্যসচল অভিজ্ঞতার প্রবর্তনা। এই সময়কার প্রথম কাব্যের ফসল ভরা হয়েছিল সোনার তরীতে।

তখনই সংশয় প্রকাশ করেছি, এ তরী নিঃশেষে আমার ফসল তুলে নেবে কিন্তু আমাকে নেবে কি। ”

আজ কবি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তার স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি। যার আঙিনায় কান পাতলে আজও শোনা যায় কবিগুরুর পায়ের আওয়াজ! তাকে খুঁজে ফিরে আজও কথা বলে ওঠে সময়, কথা বলে পথ-প্রান্তর, কথা বলে কুঠিবাড়ির দরজা-জানালা। সময়ের দাঁড়ি-কমা পেছনে ফেলে পড়ন্ত বিকেলে রোদের আলোয় পানির রঙ-ঢঙ দেখে এখন হয়তো আর কবিতা লিখতে বসে না কেউ।

পড়ন্ত বিকেলটাকে সাক্ষী করে রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরি হওয়ার স্বপ্ন দেখে অনেকেই, তাইতো রবীন্দ্রভক্তদের আনাগোনা কুঠিবাড়ি চত্বরে। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি।
গীতাঞ্জলির মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি ও ছিন্নপত্রের একটি পত্র/ ছবি: বাংলানিউজবংশানুক্রমে জমিদারি হাতে পাবার পর রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহ আসতে হয় ১৮৮৯ সালে। এখানে তিনি ক্রমান্বয়ে ১৯২২ সাল পর্যন্ত ছিলেন। তিনি জমিদারি দেখার ফাঁকে ফাঁকে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতেন তার বজরা নিয়ে।

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, মীর মশাররফ হোসেনসহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সে সময় নিত্য যাতায়াত ছিল এই শিলাইদহে। রবি ঠাকুর ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ করা শুরু করেন এই শিলাইদহে বসেই। পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরে ঘেরা কুঠি বাড়ির ছাদে বসে সুর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন কবি।

কুঠিবাড়িতে রয়েছে কবির নানা বয়সের ছবি। বাল্যকাল থেকে শুরু করে মৃত্যু শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে। আছে কবির নিজ হাতের লেখা কবিতা, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর প্রকাশিত কবির ছবি ও সনদপত্র। এমন কি কবি যেসব নাটকে অভিনয় করেছেন সেসব নাম ভূমিকার ছবিও রক্ষিত হয়েছে।

কবির শয়ন কক্ষে রয়েছে একটি পালঙ্ক, ছোট একটা গোল টেবিল, কাঠের আলনা, আলমারি, কবির ব্যবহৃত চঞ্চল ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিভিন্ন মনীষীর ছবি এবং রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে আঁকা ছবি ও লেখা কবিতা।

বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।  

দর্শনার্থী মিরণ খন্দকার বলেন, সংস্কৃতিমনা মানুষদের কাছে রবীন্দ্রনাথের এ বাড়ি এক তীর্থ স্থানের মতো। এখানে এলে রবি ঠাকুরের স্মৃতিতে বেশ ডুবে যাওয়া যায়। যেন তার সান্নিধ্যের পরশ পাওয়া যায়।

কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত এ কুঠিবাড়ি। শহর থেকে যাওয়া যায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।