চার নভেম্বরের সকাল। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে সূয্যিমামার মেজাজ চড়চড় করে বাড়ছে।
যাইহোক, কুতুব শাহী সালতানাতের মসনদে তখন ইব্রাহীম কুলি কুতুব শাহ। তিনি এ সাম্রাজ্যের ‘প্রথম’ সুলতান। তার আগেও তিনজন কুতুব শাহী শাসক থাকলেও ইব্রাহীম কুলিই প্রথম সুলতান উপাধি ব্যবহার করা শুরু করেন। ১৫১৮ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্প-সাহিত্যরসিক এ সুলতান সিংহাসনে বসেন ১৫৫০ সালে। সেও এক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে। ইব্রাহীম কুলির ভাই জামশেদ কুলি কুতুব শাহ নিজের বাবাকে হত্যা ও বড়ভাইদের চোখ তুলে নিয়ে ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। ইব্রাহীম কুলি পালিয়ে গিয়ে রাজ অতিথি হন বর্তমান তামিলনাড়ু অংশের বিজয়নগর রাজার। সেখানে থেকে তিনি তেলেগু ভাষা শেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার শাসনামলে তেলেগু সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বহু হিন্দু ধর্ম্বালম্বীকে তার সালতানাতের প্রশাসনিক, কূটনৈতিক ও সেনাদলের বিভিন্ন উচ্চপদে বসান।
১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে জামশেদ মারা গেলে সিংহাসনে বসেন তার নাবালক পুত্র সুবহান কুলি কুতুব শাহ। এই সুযোগে গোলকন্ডা ফেরেন ইব্রাহীম কুলি এবং সিংহাসনের দখল নেন। ১৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটা যুদ্ধে জয়ী হয়ে দখলে আনেন আদোনি ও উদয়গিরি দুর্গ। নিজ রাজ্যের নিরাপত্তা বাড়াতে গোলকন্ডা দুর্গেরও অনেক সংস্কার করেন তিনি। সেসময় দুর্গের চূড়ায় নির্মাণ করেন নয়নাভিরাম এক মসজিদ। তার নামানুসারে নামকরণ হয় ‘ইব্রাহীম মসজিদ’।
পারসিয়ান স্থাপত্যে বানানো দুই মিনারের এই মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে তিনশো বছর। নান্দনিক নকশা ও চোখ জুড়ানো কারুকাজ মসজিদের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুণ। সময়ের বিবর্তনে মসজিদের গায়ে রঙচটা ছোপ পড়লেও নীল আকাশের গায়ে মাথা তুলে ঠিক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই গোলকন্ডা দুর্গের এতো এতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিড়েও মসজিদ, মিনার ও পায়রার উড়ান ঠিকই আলাদা করে নজর কাড়ে!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এসএনএস
গোলকন্ডা দূর্গ: বোবা পাথরে অসমাপ্ত প্রেমের হাহাকার
৯শ বছর ধরে হায়দ্রাবাদের প্রতাপ বয়ে চলেছে যে দুর্গ