ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিশ্বের আজব সব শেষকৃত্য অনুষ্ঠান

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
বিশ্বের আজব সব শেষকৃত্য অনুষ্ঠান বিশ্বের আজব সব শেষকৃত্য অনুষ্ঠান

ঢাকা: মৃত্যু মানব জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। মৃত্যু নিয়ে মানুষের মনে যেমন ভয় কাজ করে, তেমনি বিস্ময় জাগায় রহস্যময় এ জগতটা। মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, মৃত্যুই জীবনের শেষ না। তাই মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তিকে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সমাহিত করার প্রচলন হয়।

মৃতের পুনর্জাগরণযুগে যুগে মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, পরিবেশ, সমাজ, সভ্যতা মৃত্যু সম্পর্কে নানা মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃতিভেদে সৃষ্টি হয়েছে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার ভিন্ন ভিন্ন পন্থা।

মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে পুতে রাখা বা আগ্নিদাহ করা পরিবেশগত কারণে আমাদের কাছে মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হলেও, কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার পদ্ধতি অবাক করার মতো।

মমিফিকেশনমমিফিকেশন
এটি একটি সংরক্ষণ পদ্ধতি। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মরদেহ মমিফিকেশন পদ্ধতিতে সমাহিত করা হতো। এ পদ্ধতিতে প্রথমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের ফেলা হয়। এরপর দেহের সব আর্দ্রতা অপসারিত করা হয়। সবশেষে লম্বা আকৃতির লিনেন কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়। আধুনিক মমিফিকেশন পদ্ধতি অবশ্য ভিন্ন। বর্তমানে মরদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু রাসায়নিক তরল ভর্তি পাত্রে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়।

তিব্বতের আকাশ-সৎকারতিব্বতের আকাশ-সৎকার
চীনের স্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতের মালভূমির গড় উচ্চতা ১৬,০০০ ফুট। তাই এ অঞ্চলকে পৃথিবীর ছাদও বলা হয়। তিব্বতের পাথুরে ভূমিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই এ অঞ্চলের অধিবাসীরা ভিন্ন এক পদ্ধতিতে মরদেহের সৎকার করে। তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরা মৃত্যুর পর মরদেহ টুকরা টুকরা করে কেটে শকুন জাতীয় পাখিদের খেতে দেওয়া হয়। মানুষের মরদেহ খাওয়া এসব পাখি আকাশে উড়ে বেড়ায় বলেই এর নাম আকাশ-সৎকার।

স্বজাতিভক্ষণস্বজাতিভক্ষণ
ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলের ইয়ানোমামো আদিবাসীদের মধ্যে এক কুৎসিত প্রথা প্রচলিত ছিল। তাদের সমাজে কেউ মারা গেলে অন্যরা ওই মৃত ব্যক্তির মাংস খেত। মনে করা হতো মৃত ব্যক্তির মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির সব ভালো গুণ, জ্ঞান, সাহস, বুদ্ধি ইত্যাদি নিজের মধ্যে সঞ্চারিত হতো। অনেক নৃ-তাত্ত্বিক গবেষকের মতে স্বজাতিভক্ষণ অতি প্রাচীনকালের কিছু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকা ও পাপুয়া নিউ গিনির কিছু অঞ্চলে আজও এদের অস্তিত্ব রয়েছে বলে দাবি অনেকের।

ভাইকিংদের রাজকীয় শেষকৃত্যভাইকিংদের রাজকীয় শেষকৃত্য
দশম শতাব্দীর আরব ভ্রমণকারী আহমদ ইবন ফাদলানের বর্ণনায় জানা যায় স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বিখ্যাত ভাইকিং জাতির সর্দারের শেষকৃত্য সম্পর্কে। ভাইকিং সর্দার মারা যাওয়ার পর দেহ দশদিন একটি অস্থায়ী সমাধির উপর রেখে দেওয়া হয়। মরদেহের পাহারায় একজন দাসী নির্বাচন করা হতো, যাকে সর্দারের সঙ্গে পরজন্মে যেতে হবে। এরপর সর্দারের মৃত দেহের সঙ্গে ওই জীবন্ত দাসীকে একটা লম্বা আকৃতির কাঠের নৌকায় রাখা হতো। নৌকায় রাখা হতো সোনা-রূপাসহ আরও অনেক মূল্যবান সামগ্রী। এরপর সেই নৌকায় আগুন ধরিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হতো সমুদ্রে।  

মৃতের পুনর্জাগরণ
মাদাগাস্কায় প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর এই অদ্ভুত প্রথাটি পালন করা হয়। এদিন কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ বের করে আনে তার নিকটাত্মীয়রা। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং পারিবারিক ভোজে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। এদিন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতেও দেখা যায় কাউকে। প্রথাটি অনেকটা পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবে দেখা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।