হাড়ির সঙ্গে সে ঢাকনা আবার আটা দিয়ে চারিদিকে আটকানো, যেন বাষ্প বের হতে না পারে। এবার চুলায় চাপানো হাঁড়ির ওপর পিঠা রেখে সাবধানে তুলে ফেলা হলো বাটি।
সোমবারের (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এসেছে তখন। রাজধানীর শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এভাবেই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। শীত না এলেও শীতের আমেজে বিগত কয়েকদিন ধরেই তিনি ভাঁপা পিঠা বিক্রি করছেন এখানে। আর কার্তিকের শেষ ও অগ্রহায়ণের শুরুর সন্ধ্যায় গরম গরম ভাঁপা পিঠা বেশ কদর পাচ্ছে বলেও বাংলানিউজকে জানালেন এ মৌসুমী ব্যবসায়ী।
শীত মানেই পিঠার সমাহার। শীত এলে গ্রামে-গঞ্জে ভাঁপা পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করা হয়। খেজুরের গুড় আনা হয়। তারপর গাছ থেকে পাড়া হয় নারকেল। এসব কিছু একত্রে করে সন্ধ্যায় বা সকালে পিঠা বানানোর আয়োজন যেন এক বিশাল উৎসব। সে পিঠা খেতে দাওয়াত দিয়ে আনা হয় কুটুমদের। ঠিক এভাবেই শীতে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায় গ্রামজুড়ে।
চুলার পাশে বসে গরম গরম ভাঁপা পিঠা খাওয়ার স্বাদই আলাদা। শহরে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার এ স্বাদ পাওয়া না গেলেও বিকেলে গরম গরম পিঠা পাওয়া যায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে। কিছু পিঠা পাওয়া যায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও। তবে সে পিঠার স্বাদ হার মানাতে পারে না মা-চাচীদের হাতে বানানো অসাধারণ স্বাদের সব পিঠার তৃপ্তিকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘গ্রামে বাড়িতে থাকতে শীতের সকালে ঘুম ভাঙতেই নাকে এসে লাগতো পিঠার এক অপূর্ব সুন্দর ঘ্রাণ। পুরো বাড়ি ম-ম করতো পিঠার ঘ্রাণে। সকালে গরম গরম খেজুর রসের পায়েস, ভাঁপা পিঠা আর পাটিসাপটা। বিকেলে হতো দুধপুলি, কুলিপিঠা। শীতের সকালে লেপের মধ্যে বসে পিঠা খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম। শহুরে জীবনে সে সুযোগটা খুব কম। তবে পাওয়া যাচ্ছে এটাই কম কীসে। ’ সুযোগ কম থাকলেও একেবারে হারিয়ে যায়নি পিঠাপুলির ঐতিহ্য। শহুরে পিঠায় মায়ের হাতের জাদু না থাকলেও আছে ভালোলাগা। তাই তো শীত এলে গ্রামের মতো শহরেও নানা রকম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শহুরে জীবনেও শীতের পিঠার মধ্যে অন্যতম এ ভাঁপা পিঠা জায়গা করে নিয়েছে সকাল আর সন্ধ্যার নাস্তার আয়োজনে। মুখরোচক-তৃপ্তির খাবার হিসেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/