চা পাতার কোলে, মাড়কসার জালে কিংবা ঘাসের বুকে এখন শিশিরে আনাগোনা। সকালের আলো ফুটতেই তার লাবণ্যময় প্রকাশ সবাইকে প্রভাতীশুভেচ্ছা জানায়।
নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে শিশিরের। সে সৌন্দর্য স্পষ্ট উজ্জ্বলতায় রাঙা। অনেকের হৃদয়কে তা বিমুগ্ধ করে। একেক স্থানের উপর খণ্ড খণ্ড অসংখ্য শিশিরবিন্দু যখন জায়গা দখল করে বসে পড়ে তখন তারা সম্মিলিত শ্বেতশুভ্ররূপে অভিনন্দিত।
চা গাছের পাতার সঙ্গে শিশিরের বন্ধুত্ব বহু পুরনো। বাংলাদেশে চা বাগানের জন্ম সে প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস। সেই দেড়শ বছর ধরে প্রতিটি চা বাগানের সেকশনে সেকশনে দীর্ঘ রাতের নিস্তব্ধতার চিরসাক্ষী হয়ে জমে শিশিরকণা। শিশিরের একটি বিন্দুতে সকালের সূর্য তার নিজস্ব প্রতিবিম্বে মিলে বিস্ময়কর সৌন্দর্যে ঝলমল করতে থাকে।
‘কী কথা তাহার সাথে’ জীবনানন্দীয় -এ লাইনটির গভীর-গোপন মিল বারংবার খুঁজে পাই চা পাতা আর শিশিরের সিক্ত সুপ্রকাশিত ভালোবাসায়। তারপর, উদ্বেলিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না!
শিকারের লোভে জাল বোনে মাকড়সা। ছোটখাটো উড়ন্ত পতঙ্গ ভুলক্রমে এসে তার জালে আটকে গেলেই তার শিকারপ্রাপ্তির পরমানন্দ। এখানেও শিশিরের সম্মিলিত দখল। জুড়ে বসে সে মাকড়সার জালে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে মাকড়সার শিশিরভেজা শুভ্রজাল শীতার্ত প্রকৃতির পুরনো সৌন্দর্য।
অবশ্য এ দৃশ্য সচরাচর পাওয়া যায় না। বনের পথে, পাতার আড়ে, প্রকৃতির নিভৃত কোণে শিশিরের ভরে ওঠা মাকড়সার জাল চোখ এড়িয়ে যায় সবার। আমাদের চলতি পথে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া এ দৃশ্য আপন শোভায় সুশোভিত।
ঘাসের বুকে শিশিরকণা বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক নিদর্শন। গ্রামের পথে-প্রান্তরে, উন্মুক্ত মাঠে, শহরে-লোকালয়ে সর্বত্রই এ দৃশ্য মনকে ভরিয়ে তোলো শীতের আমেজ ছড়ায়। এই দৃশ্য ছাড়া বাংলার শীত ঋতু একেবারেই অসম্পূর্ণ।
শীত তার হিমেল ভালোবাসাকে এভাবেই প্রতিটি ঘাসের বুকে ছড়িয়ে দেয়। বহুকালের প্রাচীন এই সম্পূর্ণ জলজপরশে বিস্তীর্ণ প্রান্তরের ঘাস তার পূর্ণতা লাভ করে– প্রতিটি স্নিগ্ধ সকালের পরশ সতেজতা হয়ে।
দিনের রৌদ্রতাপ তীব্রতা ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই শিশিরগুলো মুছে যায় প্রকৃতি থেকে। আবার প্রকৃতিতে নিস্তব্ধতা নিয়ে রাত্রি নেমে এলে শিশিরেরা ফিরে আসে শীত অনুভূতিকে নিয়ে। যুগ-যুগান্তরের এই প্রাকৃতিক সেতুবন্ধন কিছুতেই যে ছিন্ন হওয়ার নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
বিবিবি/এএ