প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পিটার গ্র্যান্ট ও বারবারা গ্র্যান্ট গালাপাগোসের প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। ১৯৮১ সালে পিটার গ্র্যান্টের একজন ছাত্র ভিন্ন ধরনের একটি ফিঞ্চ পাখি শনাক্ত করেন।
গবেষকরা ওই বিচিত্র ফিঞ্চের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। জানা যায়, পাখিটি দ্বীপে বসবাসকারী অন্য একটি ফিঞ্চ প্রজাতির বংশধর। পাখিটি অন্য ফিঞ্চদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। দুই প্রজন্ম পরই দেখা যায় তারা আলাদা একটি প্রজাতি গঠন করেছে। বর্তমানে এ প্রজাতির সদস্য সংখ্যা ৩০টি।
গবেষক বারবারা গ্র্যান্ট বলেন, আমরা ভেবেছিলাম হাইব্রিড প্রজাতির পাখিটির বংশধররা এর পূর্বপুরুষদের প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্যই ধারণ করবে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি নতুন প্রজাতিটি টিকে গেছে।
সুইডিশ গবেষক লেইফ অ্যান্ডারসন বলেন, বিবর্তন প্রক্রিয়াটা খুবই ধীরগতির। প্রাণীজগতের কোনো সদস্যের প্রাকৃতিক বিবর্তন জীবনকালে কারো পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ডারউইনের ফিঞ্চদের প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তন হয়েছে এবং তা আমাদের সামনেই ঘটেছে।
বিবর্তনবাদের প্রবর্তক চার্লস ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের বড় প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছিল গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের এক প্রকার পাখি। এদের নাম ডারউইনের ফিঞ্চ। এরা দেখতে আসল ফিঞ্চ পাখির মতো হলেও, এরা ভিন্ন একটি পরিবারের সদস্য। ঐতিহাসিকতার কারণে ডারউইনের ফিঞ্চ নামটিও প্রচলিত।
ডারউইন গালাপাগোসের বিভিন্ন দ্বীপে বসবাসকারী ফিঞ্চদের উপর গবেষণা চালান। দেখা যায়, একেক দ্বীপের বসবাসকারী পাখিদের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। পাখিগুলোও এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যায় না।
পাখিগুলোর উপর গবেষণার পর বলা হয়েছিল, ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের কারণেই একেক প্রজাতি একেকভাবে অভিযোজিত হয়েছে। যেমন- যেমন যেসব ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি বীজ খায় তাদের ঠোঁট শক্ত হয় ও খাট। আবার যেসব ফিঞ্চ ক্যাকটাসের ফুল থেকে রস খায় তাদের ঠোঁট সরু।
এই ফিঞ্চ পাখিদের উপর গবেষণা চালানোর কারণ, এরা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং এদের বিবর্তন প্রক্রিয়াটাও বেশ দ্রুত ঘটে। ধারণা করা হয়, এ পাখিদের মাত্র একটি প্রজাতি ইকুয়েডরের পশ্চিমে অবস্থিত গালাপাগোসের দ্বীপগুলোতে বসবাস করা শুরু করে। দ্বীপগুলোর পরিবেশগত ভিন্নতার কারণে ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর আগে এরা বিবর্তিত হয়ে বেশ কিছু আলাদা প্রজাতি গঠন করে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এনএইচটি/এএ