ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আজিজুর রহমানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
আজিজুর রহমানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার অ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান এমএনএ

ঢাকা: স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা বৃহত্তর দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত রাজনীতিক অ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান এমএনএ (পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য)।

প্রবাসী সরকার সুনিয়ন্ত্রিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকালে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরগুলো সম্পন্ন হলে, মুজিবনগর সরকার অ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ৭ নং সেক্টর এবং ৬ নং সেক্টরের অর্ধেক অঞ্চলের জন্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজর পদে দায়িত্ব দেন। (তথ্যসূত্র: ৩০ আগস্ট ১৯৭১ সালে জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত মুজিব নগর সরকারের জারিকৃত গোপন পরিপত্র নং: ০০০৯জি/২)।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজর হিসেবে তাঁর সদর দপ্তর ছিল ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার অর্ন্তভুক্ত তরঙ্গপুরে মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার।

একইসাথে তিনি পশ্চিমাঞ্চল প্রশাসনিক ক জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। (সূত্র : মুক্তিযোদ্ধা তালিকার লাল বই, স্বরণীয় যারা, বরণীয় যারা। পষ্ঠা নং- ৯ এবং মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, ভলিউম নং ১৪)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান এমএনএ। জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত মুজিব নগর সরকারের জারিকৃত সেই গোপন পরিপত্র অনুয়ায়ী ওই সেক্টরের সামরিক কমান্ডার এবং অধনস্ত সকলের জন্যে তাঁর নির্দেশ মানাটা ছিল বাধ্যতামূলক। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য বিষয়েও পরামর্শ দেবার এখতিয়ার তাঁর ছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাঁর সামরিক বিষয়ে প্রদত্ত পরামর্শ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সেক্টর কমান্ডারকে জানানোর নির্দেশ ছিল। ওই সেক্টরের সকল মুক্তিযোদ্ধার রিক্রুটিং সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই পদ মর্যাদায় মোট দশজন নিযুক্ত ছিলেন এবং সকলেই ছিলেন এমএনএ।

স্বাধীনতার আন্দোলনকে বেগবান এবং সুশৃঙ্খল করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ মার্চ ১৯৭১ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন আজিজুর রহমান। (তথ্য: ইতিহাসবিদ মেহরাব আলী সম্পাদিত দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র। খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৭৬)।

আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হলে তিনি ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতির দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। (সূত্র: মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড। ১৫)।    

স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষধাপে দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁ শহরে চূড়ান্ত আঘাত হানার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য শিলিগুড়ির ভারতীয় ক্যান্টনমেন্টে তিনি জেনারেল জগজিত সিং অরোরার সাথে মিলিত হন। তারই ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের এই অকুতোভয় নেতা মিত্র বাহিনীর অগ্রগামী দলের সাথে ৪ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলার গৌরবের পতাকা উড়িয়ে দেন।

তিনি ১৯৭০ সালে বৃহত্তর দিনাজপুরের আসন থেকে  এমএনএ (ঠাকুরগাঁ, বালিয়াডাঙ্গি, রানিশংকৈল এবং হরিপুর থানা) নির্বাচিত হন ।  

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রট নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। (তথ্য: ইতিহাসবিদ মেহরাব আলী সম্পাদিত দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র, খণ্ড: ৫)।

বৃহত্তর জিনাজপুর জেলার রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, তিনি ১৯৬০ এর জুন থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। কিন্তু ১৯৬৬ সালের জুন মাসে ৬ দফা ঘোষণার প্রেক্ষিতে জেনারেল আইয়ুব খানের জেল জুলুমের ভয়ে রাজপথ থেকে যখন বেশীরভাগ নেতাই সরে দাঁড়ালেন, তখন অ্যাডভোকেট মো. আজিজুর রহমান মাথায় গ্রেফতারের হুলিয়া নিয়েও জনতার অকুতোভয় সৈনিকের মতো গুটিকয় নেতা-কর্মী নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (দৃশ্যত কার্যকর সভাপতি) হিসেবে রুখে দাঁড়ান আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার জন্যে একজন বিপ্লবীর ভূমিকায়।

ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশি রাজনীতিতে যুক্ত তাঁর বিপ্লবী পিতা মওলানা আকিমুদ্দিন সরকারের হাত ধরে তিনি স্কুল জীবনে ১৯৩৭ সালে শেরে এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পাটির সদস্যপদ নেন।    

বাঙালি জাতীয়তাবাদের এই উজ্বল নেতার রাজনৈতিক পদযাত্রায় দেখা যায়,  তিনি ১৯৪২ সালে অবিভক্ত বাংলা মুসলিম ছাত্রসংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। এরপর ১৯৪৪ সালে ডিস্টিংশনস সহ (সকল বিষয়ে ৮৫ শতাংশ নম্বর) তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তৃতীয় স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।  

১৯৫০ সালে আইনজীবী হিসেবে দিনাজপুর বার কাউন্সিলে যোগদান করে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দান করেন।

এরই পাশাপাশি জনতার মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগাতে তিনি বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায় ১৯৫৫ সালে সাপ্তাহিক আওয়াজ নামে সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি সম্পাদক এবং মালিক হিসেবে এই পত্রিকার মাধ্যমে শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন। (তথ্য: ইতিহাসবিদ মেহরাব আলী সম্পাদিত দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র। খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৫৫ এবং ৫৮২)।

১৯৭২ সালে স্বাধীনতা উত্তর সংবিধান তৈরি করার প্রত্যয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) এর মর্যাদার বদলে এমসিএ (কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি অব বাংলাদেশ) হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে নিয়োজিত হন আজিজুর রহমান।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অন্যতম কান্ডারি এবং বৃহত্তর দিনাজপুরের সূর্যসন্তান, সর্বস্বত্যাগী অকুতোভয় এই জননেতা ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন ঠাকুরগাঁ মহকুমার মোহম্মদপুর গ্রামে ১৯২০ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বিপ্লবী পিতা মওলানা আকিমুদ্দিন সরকার এবং মাতার নাম আলেকজান নেসা।

১৯৯১ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়াস্থ বাড়িতে নিভৃতে ইন্তেকাল করা এই দেশপ্রেমিক দিনাজপুর শহরে সোনাপীর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।