শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র এই গ্রামটির প্রতিটি বাড়ির বাইরের দেয়ালজুড়ে এখন খেলা করছে উজ্জ্বল রঙ আর মনকাড়া ছবি। চারিদিকে রঙ-বেরঙের ছবিতে শোভমান দেয়ালগুলো তৈরি করছে দৃষ্টিনন্দন আবহ।
গ্রামের মানুষজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতেই বাড়িঘরের দেয়ালে দেয়ালে বাড়ির লোকদের দিয়েই ছবি আঁকানোর একটি উদ্যোগের ফল এটি।
দেয়ালে আঁকা এসব ছবির সুবাদে গ্রামটি এখন বাইরের মানুষের কাছে ‘ছবির গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়ে গেছে। একই সঙ্গে তা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় এক পর্যটন স্পট। দিন দিন বাড়ছে দর্শনার্থী আর বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি লোকজনকে সামাজিক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হবার পথও দেখাচ্ছে গ্রামজুড়ে দেয়ালে আঁকা বাহারি এসব ছবি।
হাজারো ছবির মধ্যে প্রতিটিই অনন্য আর দৃষ্টিনন্দন। যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি মেয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। ঘরে বন্দি না থেকে মেয়েদেরকে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটার ইঙ্গিত যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে এতে। কোনোটায় আবার খাঁচা ছেড়ে উড়ে যাওয়া পাখির স্কেচ। সব বাঁধা ভেঙে গ্রামের মানুষকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যেন। এরকম হাজারো নয়নশোভন ছবি আর রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে পুরো খেরলা গ্রাম।
গুঁরগাও শহরভিত্তিক এনজিও ‘ডোনেট অ্যান আওয়ার’ (DoaR) মূলত শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে। এনজিওটি যখন দেখলো যে, খেরলা গ্রামের লোকেরা কাজ পাচ্ছে না বলেই তাদের অভাবও ঘুচছে না তখন তারা এই অভিনব উদ্যোগটি নেয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিওএআর- এর প্রতিষ্ঠাতা মিনাক্ষী সিং বলেন, আমরা শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম, তাদের দারিদ্র্য শিক্ষার অভাবের কারণে নয়, বরং কাজের সুযোগ না থাকার কারণে। ।
এনজিওটি তখন গ্রামটিকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানকার লোক চিত্রের আদল ও কারুশিল্পের ধাঁচকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রামটিকে ছবির পর ছবি ও রঙে-নকশায় সাজিয়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
পর্যটকদের জন্য রাখা হয় আরো অনেক আকর্ষণ । যারা এখানে আসবে তারা সারাদিন এখানে থাকবে, গ্রামের লোকদের তৈরি করা খাবার কিনে খাবে, তাদের সঙ্গে মিশবে, খেলবে, আড্ডা-টাড্ডা দেবে মৌজমাস্তি করবে।
মার্বেল খেলার মতো স্থানীয় অনেক খেলা আছে যা খেলে মজা পাবে পর্যটকরা। এছাড়া এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখার সুযোগ তো আছেই।
শুরুতে গ্রামের মানুষেরা এসবে মোটেই আগ্রহী ছিল না। গাটেঁর টাকাকড়ি খরচ হবে ভেবে তারা তখন দ্বিধায় ছিল। কিন্তু এক সময় তাদের ভুল ভাঙে। যখন তারা বুঝতে পারলো এতে আখেরে তাদের বরং লাভই হবে, তখন তারা আর দেরি করলো না।
দীর্ঘমেয়াদি লাভের কথা ভেবে তারাও নেমে পড়লো নতুন ছবি আর রঙের এই নতুন মহাযজ্ঞে। তারা নিজেরাই রঙ কিনলো, দেয়াল সাজিয়ে তুললো নিজেদের আঁকা ছবি- ছবিতে। আর সে আকর্ষণে ছুটে আসছে দুনিয়াশুদ্ধ লোক---নানা দেশ-দেশান্তর থেকে।
যাদের আঁকার দক্ষতা ছিল না তাদের দেয়ালে এসে ছবি এঁকে দিয়েছে ডিওএআর-এর স্বেচ্ছাসেবকরা আর গ্রামের আঁকনপটু ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এমএসএ/জেএম