বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মেলায় শেষ দিনের আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। আলো নেভার পরপরই গুণগুণিয়ে উঠে মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান- ‘শেষ হয়েই গেল তাহলে বাঙালির এ প্রাণের মেলা’।
আর দর্শনার্থীরা অনান্য দিনের মতোই শেষ দিনেও আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন সময়। সবমিলিয়েই লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিলো মেলার দুই প্রাঙ্গণই। বিশ্বের বুকে বিরল এক মাসের এ মেলাতেও যেন সাধ মেটেনি বইপ্রেমীদের। তাইতো অনেকেই আক্ষেপ করে বলেছেন, আরও কিছুদিন না হয় চলতো!
চার সপ্তাহের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। বাংলা একাডেমির হিসেব মতে ৭০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে এবারের মেলায়। নতুন বই এসেছে সাড়ে চার হাজার।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ২৫৫টি। এর মধ্যে গল্প ৪৫, উপন্যাস ৩১, প্রবন্ধ ৯, কবিতা ৭৭, গবেষণা ৫, ছড়া ৭, শিশুসাহিত্য ৭, জীবনী ৭, মুক্তিযুদ্ধ ৫, বিজ্ঞান ৭, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, রাজনীতি ৫, স্বাস্থ্য ১, রম্য/ধাঁধা ১, ধর্মীয় ১, অনুবাদ ৫, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৭ এবং অন্যান্য বিষয়ে আরও ৩১টি বই।
এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ‘বাংলদেশের নৃগোষ্ঠী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাহমান নাসির উদ্দিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং রণজিত সিংহ। সভাপতিত্ব করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারী।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীরা সাংস্কৃতিকভাবে যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করেন তা আমাদের মূল ধারার সংস্কৃতিরই অংশ। তাদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করে। রাষ্ট্রের কর্তব্য তাদের ভাষা-সংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষা এবং সার্বিক বিকাশের ব্যবস্থা করা।
সভাপতির বক্তব্যে রাশিদ আসকারী বলেন, নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নতকরণ যেমন জরুরি তেমনি তাঁদের আদি ভাষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধানও আমাদের দায়িত্ব।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত ভাষণ রাখেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, এবারের মেলা সার্বিক অর্থেই সর্বাঙ্গসুন্দর একটি মেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণ যে বেগবান হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল তা এবারের মেলাতেও প্রমাণিত হয়েছে। এ বছরের ভুলত্রুটিগুলো হয়তো আগামী মেলায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক কম প্রকাশিত হয়। এ ধরনের বই আরও প্রকাশিত হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, এবারের গ্রন্থমেলায় শিশু ও অভিভাবকসহ প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
এইচএমএস/এসআইজে/আরএ