ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফুটন্ত মুকুলের সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
ফুটন্ত মুকুলের সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগান মুকুলে ছেয়ে আছে পুরো গাছ

দিনাজপুর: গাছের শাখায় শাখায় দুলতে থাকা মুকুল ফোটায় আশার আলো জেগেছে বাগানি ও লিচু চাষিদের মনে। ফুটন্ত মুকুল থেকে বের হওয়া সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে লিচু বাগান ও আশপাশে। যা মুগ্ধ করছে পথচারি ও আশপাশের বসবাসরত মানুষদের।

মৌমাছিরা ফুটন্ত মুকুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। মৌমাছির ভোঁ ভোঁ দৌড় ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দে মুখরিত এখন লিচু বাগানগুলো।

স্থানীয় বাগানি ও লিচু চাষিরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফুটন্ত মুকুল থেকে লিচু দানা আসার আগেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন চাষিরা।

শীত মৌসুম বিদায় হলেও এখনও বৃষ্টিপাতের দেখা না পাওয়ায় সেচের মাধ্যমে লিচু গাছের গোড়ায় পানি সরবরাহ করছেন তারা। দিনে কঠোর রোদের তাপে ফুটন্ত মুকুলের সব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় সব বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে তাদের।

মুকুলে ছেয়ে আছে পুরো গাছরসালো ও স্বাদে ভরপুর মধু ফল দিনাজপুরের লিচুর কদর দেশসহ রয়েছে পৃথিবীজুড়ে। দিনাজপুরের লিচু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হয়। স্বল্প সময়ে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিনাজপুর জেলায় লিচুর চাষ দিন দিন বেড়েছে। ফাঁকা পড়ে থাকা পরিত্যক্ত অনাবাদি জমিতে এখন লিচু চারা রোপণ করছেন স্থানীয়রা। দিনাজপুরে প্রতিবছর লিচুর জন্যই শহরের কালিতলাস্থ নিউ মার্কেটে বড় আকারে বাজার বসে। এ বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠানো হয়। এবারও লিচুর বাজার হওয়ার অগ্রিম প্রস্তুতি চালাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষি ও বাগানিরা।  

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে ২০০৯ সাল থেকে লিচু চাষ এই অঞ্চলে বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে দিনাজপুর জেলার ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হলেও তা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি। স্থানীয়ভাবে লিচু সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে লিচু চাষে আরো আগ্রহ বাড়বে মানুষের।

মুকুলে ছেয়ে আছে পুরো গাছদিনাজপুরে উল্লোখযোগ্যভাবে বেদানা, চায়না থ্রি, চায়না ফোর, মাদ্রাজি ও বোম্বাই জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটী, সদর উপজেলার মাসিমপুরে লিচু চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে বিরল উপজেলার মাধববাটী দিনাজপুর সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে ও মাসিমপুর  সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

দিনাজপুর বিরল উপজেলার মাধববাটী এলাকার লিচু চাষি মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘লিচু গাছে সদ্য আসা মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। ফুটন্ত মুকুলের সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগান। মুকুল আসার মাস খানেক আগ থেকেই বাগানের পরিচর্যা করতে শুরু করেছি। ফল না উঠা পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা করে যেতে হবে। বর্তমানে ফুটন্ত মুকুল ধরে রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা করতে কখন কোনো ধরনের বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে এর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে অনূকুল আবহাওয়া থাকলে এবার প্রচুর পরিমানের ফলন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন এই লিচু চাষিরা।

লিচু গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে অধিক লাভবান হওয়ায় আশায় রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা লিচু বাগান কিনছেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিন থেকে মুকুল ফোটতে শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফুটন্ত মুকুল থেকে আসতে শুরু করবে লিচু দানা। এ মুহুর্তে সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে প্রতিটি এলাকায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বাগানিদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।