পৃথিবীতে হোমো ইরেকটাসদের আগমন ঘটে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে। কিন্তু নিয়ানডারথালসহ বাকিসব হোমিনিডের (দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে শেখা বানর সদৃশ প্রাচীন মানব প্রজাতি) তুলনায় এই হোমো ইরেকটাসরা বেশ অলস ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে অনিচ্ছুক একটা প্রজাতি।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদরা আরব উপদ্বীপে পাওয়া নব্যপ্রস্তর যুগের আদিম মানুষের প্রায় হাজারখানেক নিদর্শন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ২০১৪ সালে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফ্ফাকাহ্ নামক স্থানে পাওয়া হোমো ইরেকটাসদের পাথরের হাতিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এদের বিলুপ্তির কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন তারা। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করে ‘পিএসওএস ওয়ান’।
গবেষকরা জানান, প্রথম হোমিনিড হিসেবে বিশ্ব পরিভ্রমণে বের হওয়া হোমো ইরেকটাসরা সহজে পানি ও পাথর সংগ্রহ করা যায় এমন এলাকায় বসবাস করতো।
গবেষক দলের প্রধান সেরি শিপটন বলেন, হাতিয়ার তৈরির জন্য ক্যাম্পের কাছে যেসব পাথর পাওয়া যেত সেগুলোই এরা কাজে লাগাতো, যা বেশ নিম্নমানের। ক্যাম্পের কিছুটা দূরে উন্নতমানের পাথরের মজুত থাকার পরও পাহাড়ে চড়তে হবে বলে এরা সেখানে যেত না। পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথর দিয়েই এরা কাজ চালাত।
গবেষকরা ওই পাহাড়ের পাথর পরীক্ষা করে দেখেন, হোমো ইরেকটাসরা সেগুলো ধরেও দেখেনি। অপরদিকে নিয়ানডারথাল ও হোমো সাপিয়েনরা বিভিন্ন পাহাড়ে চড়ে উন্নতমানের পাথর সংগ্রহ করে অনেক দূর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেত।
শিপটন আরও বলেন, এরা কেবল অলসই নয়, খুব রক্ষণশীলও ছিল বটে। পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলেও এদের হাতিয়ারের আকৃতি বা কার্যকারিতা একইরকম ছিল। এদের সমাজের কোনো প্রকার অগ্রগতি ঘটেনি। বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়া একটি নদীগর্ভে এদের হাতিয়ারগুলো আবিষ্কৃত হয়। সম্ভবত শেষ দিকে এদের টিকে থাকার পক্ষে পরিবেশ খুবই শুষ্ক হয়ে উঠেছিল।
আফ্রিকায় বিবর্তিত হওয়ার পর প্রথমে ইউরেশিয়া এবং পরে জর্জিয়া, শ্রীলংকা, চীন ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এই আদিম মানুষেরা। আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এনএইচটি/এমজেএফ