ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সাহিত্যের উৎসবে মুক্ত চিন্তার বার্তা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
সাহিত্যের উৎসবে মুক্ত চিন্তার বার্তা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: সন্ধ্যা বাতি তখন জ্বলে গেছে বাংলা একাডেমি চত্বরে। সারাদিন যে মানুষগুলো ঘুরে ফিরে অংশ নিচ্ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের বিভিন্ন সেশনে, তাদের সঙ্গে সন্ধ্যাবেলায় যোগ হলো আরও সাহিত্যানুরাগী। তাদের সবাইকে নিয়েই মুক্তচিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর কথা বললেন আয়োজক ও আয়োজনের অতিথিরা।

বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) শুরু হয়েছে অষ্টম ঢাকা সাহিত্য উৎসব। কথাসাহিত্যিক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত যাচ্ছে এ উৎসব।

সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি।

উৎসবের প্রথমদিন সকালে মুনমুন আহমেদ, অপরাজিতা মুস্তাফা এবং রেওয়াজ পারফরর্মিং আর্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদের কত্থক নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। এরপর উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক, পুলিৎজার বিজয়ী সাহিত্যিক অ্যাডাম জনসন ও নন্দিতা দাসও উপস্থিত ছিলেন এ আয়োজনে।

উদ্বোধনের সময় আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৃজনশীল এবং জ্ঞানের ওপর বিশ্বাস করতেন। বর্তমান সরকারও সব সময় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: 

আলোচনা, চলচ্চিত্র–নাটক প্রদর্শনসহ প্রায় ৯০টি অধিবেশন থাকছে এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। আছে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি। তিন দিনের এ উৎসব চলবে আগামী শনিবার (১০ নভেম্বর) পর্যন্ত, যার প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় ১৫টি অধিবেশন।

এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা। উত্তর আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সূচনাপর্বে ক্ষমতায় আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় দুইশ’ বছরের পুরনো এ রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ খুঁজতে আলাপে বসেন অ্যাডাম জনসন, ডেভিড বিয়েলো, জেমস মিক, কোর্টনি হোডেল ও নিশিদ হাজারি।  

‘পোস্ট-আমেরিকা ফিউচার’ শিরোনামে ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধনী এই অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন উৎসবের অন্যতম পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ।

এসময় অ্যাডাম জনসন বলেন, যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থার ফলাফল হিসেবে শোষিত গোষ্ঠী আরও বেশি শোষণের শিকার হয়।  

এরপর ছিলো রিকশা বালিকার গল্প। বাংলাদেশের মেয়ে নাইমার প্রবল ইচ্ছা রিকশা চালানোর। সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কি হয়নি- তা নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশু সাহিত্যিক মিতালি বোস পার্কিন্স লিখেছেন ‘রিকশা গার্ল’ উপন্যাসটি। নিউইয়র্ক লাইব্রেরি নির্বাচিত গত শতাব্দীর সেরা ১০০ শিশু সাহিত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এ বইটি।

আয়োজনে মিতালি বোস পার্কিন্স বলেন, শিশুদের জন্য লেখার কারণ, আমি বড়দের পছন্দ করিনা। শিশুদের কোনো ধরনের পূর্বানুমান থাকে না। তারা খোলা চোখে যা দেখে, যা পড়ে সেভাবেই কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত করতে পারে। তাই শিশুদের নিয়ে, শিশুদের জন্য কাজ করতেই আমার যত আগ্রহ।

দুপুরে ‘সময়ের গান, অসময়ের কবিতা’ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তারা শোনালেন ছোট থেকে বড়বেলার গান। সঞ্চালনা করেন কবি শামীম রেজা।

পড়ুন: ​
‘সময়ের গান অসময়ের কবিতায়’ নূর-মিলনের স্মৃতিচারণ

বিকেলে ‘প্রকাশনা শিল্পের সংকট সেশনে’ প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। এসময় আলোচনায় যোগ দেন প্রকাশক খান মাহাবুব, মিলনকান্তি নাথ, সৈয়দ জাকির হোসাইন, মাহরুখ মহিউদ্দীন এবং পশ্চিমবঙ্গের ‘দে প্রকাশনা’র প্রকাশক অপু দে। সঞ্চালনায় ছিলেন ফিরোজ আহমেদ।

আলোচকরা বলেন, দু’যুগ আগে গ্রন্থনীতি করা হয়েছে। কিন্তু দশ শতাংশও পালন করা হয়নি। এটাই আমাদের বড় সংকটের বিষয়। ভারতে ইংরেজি বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বাংলা বইয়ের  চাহিদাও সেই হারে বাড়ছে কিনা, সেটা বলতে না পারলেও কমছে না- সেটা নিশ্চিত।
ছবি: জিএম মুজিবুর
এছাড়া অন্যান্য অধিবেশনের মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টায় আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ছিলো ‘ক্রাশিং রিয়েলিটিস’ শিরোনামে আলোচনা। এতে মোহাম্মদ হানিফ কথা বলেন রস পোর্টারের সঙ্গে। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিলো ‘যে গল্পের পাঠক নেই’ শিরোনামে আলোচনা। এতে অংশ নেন কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, আহমেদ মোস্তফা কামাল, হামিম কামরুল হক ও রাশিদা সুলতানা। সঞ্চালনা করেন পারভেজ হোসেন। আলোচনা চলতে চলতেই নভেরা প্রদর্শনালয়ে উদ্বোধন করা হয় সান্ড্রা কুপের প্রদর্শনী ‘দ্য ট্রি অব লাইফ।

দুপুর পৌনে ২টার পর্বে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রু রোল্যান্ডসনের সঙ্গে ‘দ্যা ডে দ্যাট ওয়েন্ট মিসিং’ শিরোনামে আলোচনা করেন রিচার্ড বেয়ার্ড। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিলো ‘দ্য রাইট টু লাই’। পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্যিক গার্গ চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাকির কিবরিয়া, সৈয়দ মাফিজ কামাল অনিক ও ডেভিড বিয়েলো।

বিকেল ৩টার পর্বে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিলো ‘ভাঙ্গা-গড়ার দিনগুলো: স্মৃতিচারণে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে আলোচনা।  

এতে অংশ নেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক আফসান চৌধুরী ও কাইয়ূম খান। নভেরা প্রদর্শনালয়ে রফিক-উম-মুনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় ‘অনুবাদ: মূলানুগ নাকি রূপান্তর’ শিরোনামে আলোচনা করেন আলম খোরশেদ, আলিম আজিজ, মোজাফ্ফর হোসেন ও মিহির মুসাকি। কসমিক টেন্টে ছিলো ‘টেলস অব ওয়ান্ডার: মিথস্ অ্যান্ড ফেয়ারিটেলস’। স্যালি পোমি ক্লাইটন ও কায়সার হকের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সুমন রহমান। একই সময় নজরুল মঞ্চে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের কবি আবৃত্তি।

এর পর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় নন্দিতা দাস পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘মান্টো’। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে অ্যানি জায়েদীর সঞ্চালনায় কথা বলেন নন্দিতা দাস। একই সময়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিচালনায় চলছিলো ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ শিরোনামে কবিতা পাঠের আসর, নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিলো মিতালী বোস পারকিন্সের পরিচালনায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সৃজনশীল লেখার আয়োজন ‘ফায়ার এস্কেপ’। দিনের শেষ আয়োজন ছিলো নজরুল মঞ্চে। সেখানে গান গেয়ে শোনান জয়িতা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
এইচএমএস/এপি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।