ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কথা, আবৃত্তি ও গানে সব্যসাচী লেখকের স্মরণ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
কথা, আবৃত্তি ও গানে সব্যসাচী লেখকের স্মরণ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী

ঢাকা: গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প,  নাটক, গীতিকবিতা ও চিত্রনাট্যসহ সাহিত্যের সকল শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলে এদেশের সাহিত্যে তিনি সব্যসাচী  লেখক হিসেবেই সমাদৃত। যৌবনের প্রারম্ভ থেকে শুরু করে মৃত্যুশয্যায়ও বিরামহীনভাবে করে গেছেন সাহিত্যচর্চা।

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ছিল সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যকর্মের ওপর আলোচনা, গান, কবিতা ও লেখকের নতুন তিনটি বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে জন্মজয়ন্তী উদযাপন করেছে লেখকের পরিবার ও তার প্রকাশকরা।

বিকেলে লেখকের গুলশানের বাসভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় জন্মোৎসবের এ আয়োজন।

গুলশান ১ এর ছায়াঘেরা পরিবেশের কবিকুঞ্জ ‘মঞ্জুবাড়ি’র উঠোন। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চের পাশে লেখকের প্রিয় দোলনাটি ছিল ফুলে ফুলে সাজানো, অন্যদিকে প্রকৃতিপ্রেমী সৈয়দ শামসুল হকের শখের তালগাছের গোড়ায় রাখা প্রতিকৃতিতে সুহৃদ ও স্বজনদের ফুলেল শ্রদ্ধা। পৌষের হিমশীতল বিকেলে এ এক অন্য রকম অনুভূতি।

ইট-কাঠের যান্ত্রিক নগরীর ছায়াঘেরা পরিবেশে গুলশানের এই বাড়িটিও যেন অন্য রকম এক রূপ পেয়েছিলো। সব কিছুর মূলে ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তাইতো অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঝরনা রহমান গেয়ে শোনান সৈয়দ হকের প্রিয় গান ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। নাট্যজন আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সৈয়দ হকের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কবি আসাদ মান্নান, নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, সংবাদ সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কবি সাজ্জাদ শরীফ, ওবায়েদ আকাশ প্রমুখ। স্বামী সৈয়দ হককে নিয়ে কথা বলেন স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক।

আনিসুজ্জামান বলেন, একজন শিল্পী তার শিল্পকর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকে। সৈয়দ শামসুল হকও তার অসাধারন সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আগামী প্রজন্ম তার লেখা পড়ে তাকে বিশদভাবে জানতে পারবে।

মফিদুল হক বলেন, সৈয়দ হকের কাছে যতবার আসতাম ততবারই নতুন কিছু শিখতাম। বেঁচে থাকলে তিনি আমাদেরকে আরো অনেক কিছুই দিতে পারতেন। তিনি অনেক শৌখিন মানুষ ছিলেন ঠিক তেমনি একজন উন্নত মানসিকতার লেখক ছিলেন। তাকে জানতে হলে তার লেখা বেশি বেশি করে পড়তে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, শেক্সপীয়রের অনুবাদ সৈয়দ হকের মতো আর কেউ করতে পারেনি। তার অনুবাদ বিশ্বসাহিত্যে অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। সৈয়দ শামসুল হককে আমি নিত্যদিন পাই। কারন তার সর্বশেষ নাটক নিয়েও আমি কাজ করেছি। লেখার প্রতিটি লাইনে তিনি সমাজের চিত্রকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেছেন।

৮৩তম জন্মোৎসব আয়োজনের মঞ্চে সব্যসাচী লেখকের তিনটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলো হলো চারুলিপি থেকে প্রকাশিত ‘ইবসেন-নাটক পীরচানের পালা (অনুবাদগ্রন্থ)’ চিত্রা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘নির্বাচিত গল্পের সংকলন গল্পগাথা (গল্পগ্রন্থ) এবং অরিত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘জলেশ্বরীর দিনপত্রী (সাহিত্য কলামের সংকলনগ্রন্থ)।

জন্মদিনের এই আয়োজনে লেখকের ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ আবৃত্তি করেন মাহমুদুল হাকিম তানভীর। এরপর তিনি লেখকের মৃতুশয্যায় রচিত ‘দৃষ্টিভূমিতে দীর্ঘছায়া’ লেখার অংশ বিশেষ পাঠ করেন। বাবাকে নিয়ে রচিত কবিতা পাঠ করেন ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক। আনোয়ারা সৈয়দ হককে নিবেদন করে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘তুমি জীবনে মরণে আমায় আপন করেছো’ গানটি পরিবেশন করেন ঝরনা রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪২ ঘণ্টা; ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
এইচএমএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।