ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নগরের মেলায় পাহাড়ের ঘ্রাণ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
নগরের মেলায় পাহাড়ের ঘ্রাণ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের সর্বত্রই রয়েছে নানান বৈচিত্র। চোখ যেদিকেই যাক না কেন, একবাক্যে তাকে প্রকাশ করা যায়- ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা...’ বলে।

সেই অপার সৌন্দর্য সুধা যদি শহরেও পাওয়া যায়, তবে তা কে না পান করতে চায়! তাইতো পাহাড়ের মানুষদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর সংস্কৃতির সুবাসে সিক্ত হতে শহরবাসী প্রাণভরে অভিবাদন জানালো পার্বত্য মেলাকে। নগরে বুক ভরে ঘ্রাণ নিলো পাহাড়ি স্বাদের।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হলো চারদিনব্যাপী পার্বত্য মেলা। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সমতলের মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিতে এই আয়োজন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বিকেলে রঙিন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে পার্বত্য মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের অপামর মানুষের সঙ্গে পাহাড়ের নিবিড় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে এই মেলা। আমাদের জাতি রাষ্ট্রে চাকমা, মারমা, হিন্দু, খ্রিস্টান কেনো বিশেষ পরিচয় নয়। আমরা সকলে মিলে এদেশের নাগরিক যেখানে অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতাই আমাদের মূল ভিত্তি।

বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য এলাকা বোঝা নয়, বরং অপার সম্পদশালী এলাকা। যারা সেখানে সন্ত্রাস করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় আমারা পাহাড়িরাও তাদের ঘৃনা করি, তাদের বিচার চাই। সরকারের সহায়তা নিয়ে আমরা সবাই মিলে পার্বত্য এলাকাকে আরও সমৃদ্ধশালী করবো।

উদ্বোধনের পর একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরিবেশিত হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গভীর রাত অবধি সেসব পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছে সবুজ ভালোবাসা মানুষগুলো। ঘরে ফিরেছে পাহাড়ী সুরের মাদকতা নিয়ে।

এদিকে পার্বত্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টল পসরা সাজিয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। তবে তার মধ্যে পাহাড়ি বিভিন্ন ফল, সবজি এবং খাবারের সাথে পোশাক আর হরেক রকম গয়নার প্রাধান্যই বেশি।

ফলের মধ্যে রয়েছে আনারস, তরমুজ, কলা, ড্রাগন, তেতুল, কাঁঠাল ইত্যাদি। সবজির মধ্যে পাহাড়ি পাকা হলুদ বেগুন, আলু, ফরাশ সিম, কুমড়ো, সজনে ডাটা, কলার মোচা, পাহাড়ি মূলার শুটকিসহ নানান কিছু। পোশাকের মধ্যে লুঙ্গি, গামছা থেকে শুরু করে বিছানা ও গায়ের চাদর, ফতুয়া ইত্যাদি। অলংকারের মধ্যে হাসুলি, ঝুমকা, নানা ধরনের মালা, ব্রেসলেট, আর ব্যাগসহ পাহাড়ি নানা ঝুড়িগুলোও দেখতো মনভোলানো। তবে মেলা ঘুরে দেখা যায় আগতদের বেশিরভাগেরই পছন্দে পড়ে গেছে পাহাড়ি আখ ও সেই আখের তৈরি গুড়।

এ প্রসঙ্গে মেলায় আগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব নজরুল বলেন, মেলা ঘুরে একটা পাহাড়ি এলাকার স্বাদ পেলাম। সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো আরো মধুর করে পাহাড়ের আকর্ষণটা মনের ভেতর গেঁথে দিলো। আর জুমের আনারসের সাথে পাহাড়ে চাষ করা আখের স্বাদও বেশ মন ভোলানো।

পার্বত্য সংস্কৃতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এ মেলা চলবে আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৬টা থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এইচএমএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।