সেই গর্জন আর আলোময় স্ফুলিঙ্গগুলোকে নিয়েই যে লিয়াকত আলীর বসবাস। তাতেই আসে দৈনিক অর্থ।
কিন্তু লিয়াকত যে কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন এ পেশার দিন ক্রমশই ফুরিয়ে যাচ্ছে। তার নিজের কণ্ঠেই রয়েছে এমন আক্ষেপ আর হতাশার সুর। শুধু এক লিয়াকতই নয়; বাংলার পথে-প্রান্তরে দা, কাঁচি ধার করানোওয়ালা অনেক নিয়াকত আছেন।
সকালের নাস্তা সেরে যতটা দ্রুত বেরিয়ে পড়া। দৈনিক ৩০ টাকা মূল্যে রাত পার। অর্থাৎ কলোনীর ঝুপড়ির একটি ছোট নোংরা ঘরে কোনো রকমের রাত পার করার মূল্য মাত্র ৩০ টাকা। ৭০ বছর বয়েসী লিয়াকত আলী তার রোজগার প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, দৈনিক প্রায় তিন-চারশ’ টাকা আয় হয়। দৈনিক তিন বেলা খাওয়ার খরচ প্রায় দেড়শ’ টাকা। কোনো মতে বেঁচে আছি। এখন আর কেউ আগের মতো দা, বটি, কাঁচি, পাটা, পুতা এগুলো ধার করায় না। আগে ভালোই আয়-রোজগার হত। এখন কমে গেছে।
নিজ বাড়ি ছেড়ে শ্রীমঙ্গল আসার বিষয়ে তিনি বলেন, নিজের এলাকায় কাজ করতে লজ্জা লাগে। তাই বানিয়াচং থেকে শ্রীমঙ্গল আইছি। চার-পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি এখানে। পরিবার বাড়িতেই থাকে। বৌ, ছেলে, ছেলেদের বৌ, নাতিসহ নয়জন রয়েছে। মাসে দু’বার বাড়িতে যাই। ছেলেরা মোটামুটি আয়-রোজগার করে।
এ বয়সে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে লিয়াকত বলেন, নিজের কাজ নিজে করতে আমি আরাম পাই। তবে এ কাজে অনেক মেহনত আছে। যতদিন পারবো নিজে কাজ করে খাওয়ার চেষ্টা করে যাবো। ছেলেদের উপর নির্ভরশীল না আমি।
২০ মিনিটের পরিশ্রমে মশলা তৈরির পাটা, পুতা ততক্ষণে ধার হয়ে গেছে। তারপর লিয়াকত ধরেছেন পটি দা। এটি ধার হচ্ছে বৃত্তাকার ঘূর্ণায়মান লৌহদণ্ডের আবর্তনে। এভাবেই দৈনিক কাজের তুমুল ব্যস্ততা। রাতে ৩০ টাকার ছোট ঘরটাতেই সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ক্লান্তির ঘুম। প্রশান্তি সকাল তখন তার ছোট ঘরকে আলো করে ফেলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/