ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

পলিথিন পুড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানালেন এমিলিয়া

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
পলিথিন পুড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানালেন এমিলিয়া

বরিশাল: শিল্পকর্ম তৈরি এবং তা প্রদর্শনের মাধ্যমে খ্যাতি কুড়িয়েছেন অনেকে। তবে খ্যাতি নন চান নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছেগুলোকে তুলে ধরতে, এমনই একজন গুণী শিল্পী হলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রাহুৎপাড়া গ্রামের এমিলিয়া রায়।

এই শিল্পী পরিবেশ দূষণকারী পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে বানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাদার তেরেসা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বহু গুণীর ভাস্কর্য।

শিল্পকর্মের মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করা শিল্পী এমিলিয়া রায়ের শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার পরম যত্নে নির্মাণ করা ভাস্কর্যগুলো তুলে দেওয়া।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা, কবিতা লেখা, গান গাওয়া ও নিজের লেখা গানে কন্ঠ দেওয়ার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল এমিলিয়ার। এসএসসি পাশ করার পরেই বিয়ে হয় আলফ্রেড রায়ের সঙ্গে। সংসার জীবনে ঢুকে লেখাপড়া থেমে গেলেও থেমে যায়নি তার ইচ্ছা শক্তি। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মা এমিলিয়া রায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বাবলম্বী হওয়া ৬৫ বছর বয়সী এমিলিয়া ছেলে মেয়ে সবার দ্বায়িত্ব নিয়েছেন।

কথা হলো এমিলিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সালটি ছিল ১৯৯০। কোনো একদিন রান্না করা গরম কড়াই পাশের পলিথিন ব্যাগের ওপর রাখার পর তা গলে যায়। তখনই তার মনে হলো পলিথিন দিয়ে কিছু না কিছু একটা করা যাবে। সেদিন থেকে বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ সংগ্রহ করে শুরু করেন আগুনে পুড়িয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ। বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রাসেল এবং মাদার তেরেসার ভাস্কর্য। পর্যায়ক্রমে তৈরি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যও। ছোট বড় মিলে শতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে তার সংগ্রহে।

এমিলিয়ার হাতে নিজের বানানো ভাস্কর্য।  ছবি: বাংলানিউজ

বার্ধক্যজনিত কারণে হাঁটা চলায় সমস্যা হলেও থেমে নেই তার শিল্পকর্ম নির্মাণের কাজ। নিরলসভাবে নির্মাণ করে চলেছেন ভাস্কর্য। শুধু পলিথিন দিয়ে নয় তুলা দিয়ে আঁকা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিভিষীকাময় দৃশ্যগুলো। এছাড়াও মানুষের চুল সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল সম্বলিত বাংলাদেশের মানচিত্র।

কিন্তু সব ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছা নেই এমিলিয়ার। শেখ রাসেলের ভাস্কর্যটি তিনি রাখতে চান নিজের কাছে।

কারণ হিসেবে এমিলিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার তিন বছরের ছেলে তিনু রায় অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। নির্মমভাবে হত্যার আগে ঘাতকদের কাছে শেখ রাসেলের বাঁচার আকুতির মধ্যে আমি খুঁজে পেতে চাই তিনুকে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
এমএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।