ফাওয়াজ বিন এজাজের মতো শিশু থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবারই ভরসা এখন ছাদ। ইট-পাথরের রাজধানীতে এই ছাদেই শুধুমাত্র দেখা মিলে আকাশের।
রামপুরা নতুন রাস্তা পশ্চিম হাজিপাড়ার বাসিন্দা ফাওয়াজ বিন এজাজের মা ফাতেমা হক বাংলানিউজকে বলেন, গৃহবন্দী সময় কাটাচ্ছি এখন। ঘরে বসে রান্না করে, ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেই সময় পার হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা ফাওয়াজকে ঘিরেই।
তিনি বলেন, ছোট বাচ্চাদের শরীরে রোদ লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গৃহবন্দী অবস্থায় বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। সে সময় বাড়িওয়ালাকে বললে, তিনি ছাদ খুলে দিয়েছেন। সেখানেই রোদ পোহাই। গল্প করি ওর বাবার সঙ্গে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো আগারগাঁও ষাট ফিটের বাসিন্দা সামরীনা আমীরের। সে পরীক্ষা এখন কবে হবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
সামরীনা আমীর বলেন, ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে? কিন্তু নিজেকে, নিজের পরিবারকে ভালো রাখতে হলে ঘরেই থাকতে হবে। ঘরে বসে পরীক্ষার পড়াগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছি। এর বাইরে আব্বু, আম্মু আর আপুর সঙ্গে গল্প করছি।
তিনি বলেন, পরীক্ষার কারণে এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে না পারার একটা দুঃখ ছিলো। কিন্তু পরীক্ষা পেছালেও পহেলা বৈশাখ আর উদযাপন করা হয়নি। তবে পহেলা বৈশাখের দিন শাড়ি পড়ে সেজেগুছে ছাদে গিয়েছি। আসলেই এই ছাদটাই এখন ঘর থেকে বাইরের দুনিয়া।
সামারফিল্ড স্কুলের শিক্ষকা শাহানা আক্তারের ছুটি শুরু হয়েছে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির আগেই। এর পর থেকে ঘরেই আছেন তিনি। এর মধ্যে তার আবাসস্থল মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একাংশ লকডাউন করে ফেলায় বেশ চিন্তিত তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা যারা শিক্ষকতা পেশায় আছি, তাদের ছুটি একটু বেশিই। কিন্তু এবার এ ছুটি যে কবে শেষ হবে তা জানি না। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। তবে একদিক থেকে ভালো হয়েছে। নতুন সংসারটা স্বামীর সঙ্গে মিলে গুছিয়ে নিচ্ছি। এর বাইরে যাওয়া বলতে শুধু ছাদেই যায়। ছাদটাই এখন আমার ঘরের বাইরে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন।
তবে উপরের বাসিন্দাদের মতো সবাই এমন বাড়িওয়ালা পাননি। অনেক বাড়িওয়ালা করোনা সংক্রমণের ভয়ের কথা বলে বন্ধ করে রেখেছেন ছাদের দরজা।
রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা সংস্কৃতিকর্মী এনায়েত শাওন জানালেন, তার বাসার ছাদে যাওয়ার উপায় নেই। ঘরে বসেই দিন পার করছেন তিনি।
বললেন, করোনা মহামারীকালীন এই সময়ে নিয়ম মেনে যারা বাসায় থাকছে তাদের জীবন একপ্রকার দুর্বিষহ ও একঘেঁয়ে হয়ে উঠেছে। এই শহরে লাখো লাখো ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বাসার ছাদে যাওয়ার অনুমতি নেই, গ্রিলবন্দী বারান্দা আছে তো সেই বারান্দায় দুইজন একসাথে বসার জায়গা নেই। অন্তত বিকেলে একটু সময়ের জন্য ছাদে যেতে দিলে কি বাড়িওয়ালাদের খুব ক্ষতি হবে? বাড়ি ভাড়া কমাতে তো বলছি না, একটু সময়ের জন্য ছাদে যাওয়ার অনুমতি চাইছি। করোনা আতঙ্কে বাসায় থাকতে থাকতে, খোলা আকাশ দেখতে না পেয়ে, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সবাই।
একই এলাকার বাসিন্দা জুয়েল আজিম বলেন, বারবার বাড়িওয়ালাকে বলেও ছাদের দরজা খোলাতে পারিনি। এখন বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে এক প্রকার কারাজীবন পার করছি। আমরা ঘরে থাকতে চাই। কিন্তু একটু খোলা আকাশ দেখতে চাওয়ার দাবি তো জানাতেই পারি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২০
ডিএন/এজে