ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ফণা তোলা সাপ।
এক কথায় দেখতে অসাধারণ! এই নাগলিঙ্গম ফুটেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে (নগর ভবন)। ভবনের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সামনে চোখে পড়বে দুর্লভ প্রজাতির গাছটি।
তাই অনেকটা বিস্ময়ের ফুলই বলা চলে- নাগলিঙ্গম। দেশে এই বৃক্ষের সংখ্যা খুবই কম। ফুলের রং,আভিজাত্য, মঞ্জুরি, গঠনশৈলী- সবকিছু মিলিয়ে একে অনন্য করে তুলেছে। নাগলিঙ্গম ফুলের রানি। পাপড়ির মধ্যে নাগ বা সাপের মতো ফণা। সম্ভবত এ কারণেই এর নামকরণ হয়েছে ‘নাগলিঙ্গম’।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. হায়দার বলেন, নাগলিঙ্গম একটি বিরল প্রজাতির বৃক্ষ। দেশে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি গাছ রয়েছে। এই গাছের ইংরেজি নাম ‘Cannonball Tree’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস আমাজান ও মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল।
নাগলিঙ্গম ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার, কিন্তু ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বায় পৌঁছাতে পারে।
গাছের গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হওয়া দড়ির মতো এক ধরনের দণ্ডের মঞ্জুরিতে ফোটে। ফুলের আকার বেশ বড়। ফুলের পাপড়ি মোটা। লাল, গোলাপি ও হলুদের মিশ্রণ নাগলিঙ্গমকে করেছে আরো আকর্ষণীয়। মার্চ মাসে ফুল ফোটা শুরু হয়।
বছরের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল শোভা পায়।
তিনি আরও জানান, ওষুধি বৃক্ষ হওয়াতে কিছু দেশে চাষ হলেও পৃথিবীতে এই গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রোপণের ১২ থেকে ১৪ বছর পর ফুল ফোটে।
‘বীজ থেকে এর চারা হয়। বছরে দুই থেকে তিনবার পাতা ঝরে যায়। ফুল শেষে বেলের মতো ফল হয়। অনেকে একে হাতির জোলাপ বলে থাকে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে অনেক ওষুধিগুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়। ’
অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার হয় এর নির্যাস থেকে। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়ার জন্য খুব উপকারী।
পাতার রসও ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ, বাত ব্যথা, অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস বিশেষ উপকারী বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু জানান, সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। অবহেলা আর অযত্নে থাকা গাছগুলোর সতেজতা ফিরিয়ে আনতে তিনি পরিবেশ বিভাগকে নির্দেশ দেন। এছাড়া নতুন গাছপালা ও ফুলের বাগান স্থাপন করেন- নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায়।
তার নির্দেশনায় পুরো মহানগর এলাকা ও নগরভবন আবারও সবুজ হয়ে উঠেছে। আর নগরপিতার নিয়মিত তদারকিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে নাগলিঙ্গমও।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ-উল-ইসলাম জানান, প্রথম মেয়াদের ক্ষমতা গ্রহণের পর এই গাছ লাগিয়েছিলেন সিটি মেয়র। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদের আসার পর আবারও এই গাছের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেন সিটি মেয়র। তার নিয়মিত তদারকিদের গাছে এবার ভালো ফুল এসেছে। ঢাকার রমনাসহ দেশের মোট ১৫টি স্থানে এই দুর্লভ নাগলিঙ্গম ফুলের গাছ রয়েছে।
জানতে চাইলে সৈয়দ মাহমুদ-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় সেতু চন্দন,আগোরা, দত্তকিয়া ও লালসালুসহ আরও বিলুপ্ত প্রায় ২০ প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন মেয়র। এছাড়া বিদেশ থেকে ২৬৯ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় গাছ সংগ্রহ করে এনে লাগিয়েছেন- রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে।
এছাড়া রাজশাহী শহরজুড়ে নতুন করে আরও ৬০ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। সব মিলিয়ে নগর ভবনসহ গোটা রাজশাহীই তাই সবুজ নিসর্গ হয়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এই পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২০
এসএস/এএ