ফেনী: ফেনী শহর থেকে আমাদের গন্তব্য ছিলো ছাগলনাইয়া ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রাম পর্যন্ত। চলতি পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপুল থেকে কিছুটা দূর এগোতেই সড়ক বিভাজকে চোখে পড়লো কাশফুল।
অল্প নয় বিভাজকের অনেকখানি অংশজুড়েই সবুজের মধ্যে শোভা পাচ্ছিলো শুভ্রতায় মোড়ানো কাশফুল। বাতাসে হেলে-দুলে মহাসড়কের যাতায়াতকারীদের যেন অভ্যর্থনা দিচ্ছিলো তারা। নীলাভ আকাশ, শুভ্রফুল আর বাতাসের গতিবেগ জানান দিচ্ছিলো প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল।
কাজের তাড়া থাকায় যাওয়ার পথে নামতে না পারলেও ফিরতি পথে আর ভুল হয়নি। সহকর্মী আতিয়ার সজল ও আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে দুই মিনিটের অনুমতি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। সায় দিলেন সফরসসঙ্গী জুলহাস, সৌরভ ও রুবেল ভাইসহ অন্যরাও। গাড়ি থেকে নেমে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখতেই ধরা দিচ্ছিলো অন্যরকম সৌন্দর্য। সফরসঙ্গীরা সবাই কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলেন শৈশবে। ব্যস্ততম মহাসড়কটাকে যেন মনে হচ্ছিলো গ্রামের মেঠোপথ। সেই পথেই কাশফুলের নরম ছোঁয়া।
ফুটে থাকা কাশফুলের ছবি তুলতে তুলতেই ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে ধরা পড়লো লাল, নীল আর হলুদ রাঙা আরও নানা প্রজাতির ফুল। শরতের দক্ষিণা বাতাসে নাকে আসছিলো হরেক রকম এসব ফুলের সুবাস। ফুল ও নানা জাতের সবুজ গাছে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে। নান্দনিক ফুল ও গাছে বর্ণিল হয়ে উঠেছে মহাসড়কটি। করোনা মহামারির সময়ে এই সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। যান্ত্রিক বিষবাষ্প কম থাকায় প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে সেজেছে।
এদিকে গাড়ির হর্ন বেজেই চলেছে। জোরে জোরে হর্ন বাজিয়ে বোঝানো হচ্ছিলো আর দেরি করা যাবে না এখনই ফিরতে হবে। উপায়ন্তর না পেয়ে আরও কয়েকটা ছবি ক্যামেরাবন্দি করে উঠে পড়লাম গাড়িতে। ফিরে এসে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের সড়ক বিভাজকে রোপণ করা হয়েছে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।
সড়ক বিভাগ জানায়, এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে বিপরীত লেনের গাড়ির ওপর না পড়ে এবং সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভাজকের ওপর রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ। ফলে মহাসড়কের কোথাও কোথাও দেখা যায় ফুলের বাগান।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, সড়ক বিভাজনে রোপণ করা গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঠগোলাপ, রঙ্গন, চন্দ্রমল্লিকা, বেলি, গন্ধরাজ, হৈমন্তী, কুরচি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, করবী, ক্যাসিয়া ও জারুল। সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে এসব গাছ-গাছালির নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। গাছে পানি দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা হয়। এর জন্য লোকও নিয়োগ দেওয়া আছে।
তিনি আরও জানান, মহাসড়কের পাশের স্থানীয়রাও নিজ উদ্যোগেও এসব গাছের যত্ন নিয়ে থাকেন। সড়কের লেমুয়া এলাকার বাসিন্দা কবির আহম্মদ জানান, সবজির মৌসুমে সড়ক বিভাজকের জায়গায় স্থানীয়রা সবজিও চাষ করেছেন। এছাড়া স্থানীয়দের অনেকেই আম ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন।
এ মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী সাংবাদিক আতিয়ার সজল জানান, এটি সড়ক বিভাগের একটি অভিনব উদ্যোগ। এ উদ্যোগটি আসলেই প্রশংসার দাবিদার। মহাসড়কের মধ্যে ফুলের বাগান দেখতে অসাধারণ লাগে। এমন সুন্দর ফুল ও ফলের গাছ মহাসড়ককে করেছে আরও মনোমুগ্ধকর। মহাসড়কে ফুল ও সবুজের সমারোহে নির্মল প্রকৃতির স্বাদ নিতে পারছেন চলাচলকারীরা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রয়েছে ১৫/২০ প্রজাতির প্রায় লক্ষাধিক বাহারি ফুলের গাছ। কিছু জায়গায় আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলগাছও। সড়ক ও জনপদ বিভাগের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত দেখভালের মধ্য দিয়ে এই পরিকল্পিত বাগান তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল-ফলগাছ ছাড়াও এখানে রোপণ করা হয়েছে মেহগনি, আকাশমনি, সেগুন, অর্জুন, কাঁঠাল, শিশু, চালতা, নিম, একাশিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধিগাছ।
সড়কের বিভাজকে এমন পরিকল্পিত বাগানকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বৃক্ষপ্রেমীসহ পরিবেশবাদীরাও।
তারা বলছেন, সড়কের এমন পরিবেশ চালচলকারীদের মধ্যে ভালো অনুভূতি জাগাবে। ক্লান্তিবোধ দূর করবে। এ ধরনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিবেশের জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
এসএইচডি/এএটি