ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন

ঢাকা: ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পার করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তার ৭৪তম জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।  

রাজনৈতিক জীবনে তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাপশি তিনি ৪০ বছর ধরে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করে আসছেন। তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন এবং উন্নয়নশীল ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের পথে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কেটেছে। জেলখানায় বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় তখন অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সার্বিক খোঁজ-খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা এনে পৌঁছে দিয়েছেন দলের নেতাদের কাছে। এভাবেই শুরু হয় তার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ৬ দফা ও পরে  ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে  হত্যা করে। তখন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত অবস্থায়ই শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের। তার সফল দুরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। বর্তমানে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনিও টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কারাবন্দি বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন। এরপর সেখান থেকে জার্মানি আসেন। পরে জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন।

দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে।

এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তার ওপরে বিভিন্ন সময় গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাকে হত্যার জন্য ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি মিথ্যা মামলায় কারানির্যাতন ভোগ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে ওঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপরিচালনায় সফলতা ও সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার ও সম্মানসুচক ডিগ্রিতে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি গত বছর জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পেয়েছে এবং তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) শেখ হাসিনাকে ’চাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সন্মাননা দিয়েছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বো্চ্চ পুরস্কার “চ্যাম্পিয়ন অব দ্য” এ ভুষিত হন তিনি।

রাজনৈতিক কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
এসকে/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।