মাদারীপুর: কেউ বিক্রি করেন ঝালমুড়ি, কেউ ছোলা আবার কেউ বিক্রি করেন শসা। হকারদের হাঁক-ডাকে মুখর থাকে ঘাট এলাকা, লঞ্চ ও ফেরি।
সোমবার (২৪ মে) লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি এসেছে এ সব হকারদের মনে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ ৪৯ দিন ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। যদিও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল, তবে যাত্রীদের অধিক চাপে ফেরিতে হকারি করাও সম্ভব ছিল না তাদের। ঘরে বসে থেকে শুধু লঞ্চ চলাচলের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। গত সোমবার থেকে লঞ্চ চালু হয়েছে আর নতুন করে আবার নিজ ব্যবসায় ফিরেছেন তারা।
নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় হকারদের দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়েছে। তবে নিজ নিজ ব্যবসায় ফিরতে পেরে আনন্দিত তারা।
বাংলাবাজার ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চ টার্মিনালে বসে যে যা বিক্রি করেন তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঝালমুড়ির জন্য পেঁয়াজ-মরিচ কাটছেন কেউ। কেউ আবার শসার খোসা ছাড়িয়ে প্যাকেট করছেন। প্রস্তুতি শেষে কেউ ছুটছেন লঞ্চের দিকে।
জানা গেছে, ঘাট এলাকায় দেড় শতাধিক হকার রয়েছেন। যারা লঞ্চ, ফেরি, বাসের টার্মিনালসহ ঘাট এলাকায় ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের খাবার আর দরকারি জিনিসপত্র বিক্রি করেন। এদের মধ্যে লঞ্চ আর ফেরি চলাচলের সময় ঝালমুড়ি, ছোলা, শসা, নারকেলের চিড়াসহ নানা মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। মূলত লঞ্চ-ফেরির যাত্রীরাই তাদের প্রধান ক্রেতা। আর এর মাধ্যমেই সংসার চালিয়ে দিব্যি ভালো আছেন তারা। তবে নৌযান (লঞ্চ) চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিল তাদের ব্যবসাও। বিপাকে পড়তে হয়েছে সংসার নিয়ে। উপার্জন ঠিকমত না হওয়ায় অনেকের ঈদ কেটেছে নিরানন্দ।
মো. রফিকুল ইসলাম। কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকায় তার বাড়ি। অনেকদিন ধরেই ঘাটে হকারি করেন। ছোলা বিক্রি করে বেশ ভালো ভাবেই সংসার চলে যায় তার। তবে লঞ্চ বন্ধের ৪৯ দিন কিছুই করতে পারেন নি।
তিনি বলেন, ফেরি চললেও ছোলা খাওয়ার কোনো টাইম ছিল না যাত্রীদের। ব্যস্ততা আর ফেরিতে ভিড়ের কারণে হকারদের পক্ষে ফেরিতে ওঠা ছিল অসম্ভব। তাই ব্যবসা বন্ধই রেখেছিলাম। লঞ্চ চালু হওয়ায় আমাদের মতো হকারদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে।
তিনি জানান, প্রতিদিন ৫/৭ কেজি ছোলা বিক্রি করেন তিনি। বাংলাবাজার ঘাটে এবং লঞ্চের ভেতরে যাত্রীদের কাছে ছোলা বিক্রি করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তার বেচাবিক্রি।
মো. হারুন অর রশিদ। শসা বিক্রেতা। বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সংলগ্ন চর এলাকার বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। ঘাটকে কেন্দ্র করেই তার জীবিকা নির্বাহ। লঞ্চে লঞ্চে শসা বিক্রি করেন তিনি। লঞ্চ চালু হওয়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এতদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটু বেশি শ্রম দেবেন বলে ভাবছেন।
তিনি বলেন, গরমে শসার চাহিদা বেশি। প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ শসা বিক্রি করি। শসা বিক্রি করেই সংসার চলে আমার। লঞ্চ বন্ধ থাকার দিনগুলো কিছুটা কষ্টে গেছে। জমানো টাকা খরচ করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ঘাটকে কেন্দ্র করে আমার মতো অসংখ্য হকারের সংসার চলে। নৌযান চললে উপার্জন, না চললে বন্ধ। যখন শুধু ফেরি চলেছে তখন যাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আর ব্যস্ততা বেশি ছিল। চলতি পথে কিছু কিনে খাবার সময় আর ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু লঞ্চ চালু হওয়ায় ধীরে-সুস্থে যাত্রীরা যেতে পারছেন। এসময় চলতি পথে নানা জিনিস কিনে খাচ্ছেন তারা।
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার ভোর থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এই নৌরুটের লঞ্চঘাট এলাকায় অসংখ্য হকার রয়েছেন। যারা যাত্রীদের কাছে মুখরোচক খাবারসহ নানা দ্রব্যাদি বিক্রি করে উপার্জন করে থাকেন।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের বাংলাবাজার ঘাট। নির্দিষ্ট কোনো হিসেব না থাকলেও প্রায় দেড় শতাধিক হকার রয়েছেন এই রুটের বাংলাবাজার ঘাটে। ঘাট এবং যাত্রীদের কেন্দ্র করেই তাদের বেচাবিক্রি। ঘাট চললে চলে তাদের জীবিকার চাকাও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২১
আরএ