ঢাকা: এক দিকে মহামারি করোনা, অন্য দিকে ধেয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই পূজাকে ঘিরেই পদ্মফুল, পেঁচা, হাতিসহ প্রতি সেটে দুর্গার সঙ্গে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে দেশের প্রতিটি জায়গার পাল সম্প্রদায়ের কারিগরদের।
রাজধানীর শ্যামপুর, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, তাঁতিবাজার ও পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল রোডের জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিত শ্রীশ্রী দুর্গামন্দিরগুলোতে গিয়ে দেখা যায় তাদের ব্যস্ততা। মাটি দিয়ে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই।
জমিদার বাড়ির মৃৎ শিল্পী বলাই পালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা গড়েন। পুজার সময়টা আসলেই বিভিন্ন জেলায় ঘুরে প্রতিমা গড়ার কাজে বেড়িয়ে পড়েন। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘শিমুলিয়া শিল্পালয়’ নিয়েই ব্যস্ত।
কাঠ, বাঁশ, খড়, এঁটেল ও বেলেমাটি দিয়ে মূলত প্রতিমা বানানো হয়। একটা পুরো সেট পাঁচ-ছয়জন মিলে বানাতে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগে। তিনি বলেন, রাজধানীর অনেক মণ্ডপেই তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রতিমা দিয়ে পূজা হয়।
একেকটি প্রতিমা গড়তে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেন তিনি। তবে এবারে করোনা, বিষয়টি অন্য রকম। মণ্ডপ বাড়ার কারণে আগের চেয়ে প্রতিমা এখন বেশি হয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে বলাই পালের ভাই হরিপদ পালের প্রতিষ্ঠান শিমুলিয়া ভাস্কর শিল্পালয়ে ও প্রতিমা বানানো হয়। তিনি বলেন, বছরের বেশির ভাগ সময় আমাদের বসে বসেই কাটাতে হয়। আমাদের যা আয় এ সময়েই। তবে করোনাকালীন সময়ে আমাদের খুব অভাব অনটনে দিন যাচ্ছে। কেউ খোঁজ খবর রাখে না। পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি।
প্রতিমা বানাতে কেমন লাগে জানতে চাইলে বলাই পাল বলেন, ভোরবেলা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কাজ। মায়ের কাজ করতে ভালোই লাগে। আর এটা গভীর সাধনার কাজ সবাই পারে না। এটাকে সুন্দর করতে হলে মায়ের রূপ অন্তরে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২১
কেএআর