ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

প্রবারণায় ফানুস কেন ওড়ানো হয়?

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২১
প্রবারণায় ফানুস কেন ওড়ানো হয়? ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: বিহারে বিহারে আলোকসজ্জা, সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন এবং আকাশে ওড়ানো হয় অসংখ্য ফানুস বা আকাশ প্রদীপ। যে ফানুসের আলোয় আলোকিত হয় এখানকার সন্ধ্যার আকাশ।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, আকাশে ফানুস ওড়ানো কেবল মাত্র উৎসব নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বাংলানিউজকে জানান,  আষাঢ়ী থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন হচ্ছে প্রবারণা পূণিমা। এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। সারাদেশের পাশাপাশি বিশেষ করে বৌদ্ধ পুরাকীর্তির শহর খ্যাত রামুতে এই দিনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। প্রবারণার আয়োজনের মধ্যে অন্যতম ফানুস এবং জাহাজ ভাসানো উৎসব।

তিনি বলেন, এ বছর রামু মৈত্রী বিহার সংলগ্ন হাইটুপি ও মেরংলোয়া কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার সংলগ্ন মাঠে পৃথক ফানুস উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেখান থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক ফানুস আকাশে ওড়ানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন বিহার থেকে ফানুস ওড়ানো হবে। বৌদ্ধ  ধর্মে ফানুস উত্তোলন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

মূলত রাজ কুমার সিদ্ধার্থ (পরবর্তীতে গৌতম বুদ্ধ) দুঃখমুক্তি লাভের দৃঢ় সংকল্পে রাজ্য, রাজত্ব, ভোগ বিলাস ধনকুম্ভ সবকিছু ত্যাগ করে সংসার পরিত্যাগ করেছিলেন শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে। এ তিথিতে তিনি সারথি ছন্দককে সঙ্গে নিয়ে অশ্ব কন্থকের পিঠে চড়ে অনোমা নদীর তীরে পৌঁছলেন। সেখানে রাজ আবরণ সারথি ছন্দককে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করলেন। তিনি ভাবলেন, আমি এখন সন্ন্যাসী, রাজকীয় বাহারি চুল কিবা প্রয়োজন। তরবারি দিয়ে চুলের গোছা কেটে নিলেন।

সিদ্বার্থ মনে মনে অধিষ্ঠান করলেন- যদি বুদ্ধ হওয়ার মত পারমী আমার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে চুলের এই গোছা মাটিতে না পড়ে আকাশে স্থিত থাকুক। এই সংকল্প করে  তিনি চুলের গোছা উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। আশ্চর্যের  বিষয় হল একটা চুলও মাটিতে পড়ল না।

বৌদ্ধধর্ম মতে, স্বর্গের ইন্দ্ররাজা এ চুলগুলো হীরা, মণি-মাণিক্য খচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে তাবতিংস নামক স্বর্গে এ চুলকে কেশ ধাতু হিসাবে স্থাপন করে একটি চৈত্য নির্মাণ করেন এবং এ চৈত্যের নাম রাখা হয় চুলামনি চৈত্য। স্বর্গের দেবতারা এখনও উক্ত চুলামনি চৈত্যের পূজা করে থাকেন।

এমন বিশ্বাস থেকে মর্ত্যলোকের বুদ্ধভক্ত পূজারীরা স্বর্গের সেই চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ দিনে ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে আকাশে ফানুস ওড়ান।

এ সময় ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করে উৎসর্গ করে খালি পায়ে বৌদ্ধরা প্রদীপ হিসেবে ফানুস উড়িয়ে উক্ত চুলামনি চৈত্যকে বন্দনা জানান। বিশেষ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুর দ্বারা মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে সাধু ধ্বনির সুরে সুরে ফানুস ওড়ানো হয়। যেই স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফানুস ওড়ানো হয় সে হিসেবে আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে ফানুস ওড়ানোর কথা। কিন্তু আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৃষ্টি এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায়  ফানুস ওড়ানোর জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকে না। যে কারণে প্রবারণা বা আশ্বিনী পূর্ণিমার দিনে ফানুস ওড়ানো হয়।

এভাবেই ফানুস ওড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২১
এসবি/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।