ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নির্মল বিনোদনের বিশ্বস্ত স্থান ‘চন্দ্রমহল ইকোপার্ক’

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
নির্মল বিনোদনের বিশ্বস্ত স্থান ‘চন্দ্রমহল ইকোপার্ক’ “চন্দ্রমহল ইকোপার্ক”

বাগেরহাট: বিশ্ব ঐতিহ্য তাজমহলের আদলে তৈরি ছোট একটি ভবন। যার নাম চন্দ্রমহল।

শিশুদের বিভিন্ন রাইডস, ওয়াকওয়ে, বিখ্যাত মনিষীদের প্রতিকৃতি, মাছ চাষের লেক, বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন ও ফল-ফুলসহ গাছ রয়েছে চন্দ্রমহলের চারপাশে।  

লেকের পাশে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ। নয়নাভিরাম এই জায়গাটির নাম “চন্দ্রমহল ইকোপার্ক”। এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্মল বিনোদনের বিশ্বস্ত স্থান হিসেবে পর্যটক টানছে পার্কটি। বাগেরহাট সদর উপজেলার রনজিৎপুর এলাকায় অবস্থিত চন্দ্রমহল ইকোপার্কে ভ্রমণপিপাসুদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হয়েছে অর্ধশত মানুষের। ভবিষ্যতে ছোট এই পার্ক ঘিরে এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে দাবি পার্ক কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয়দের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে ২০০৯ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ আমানুল হুদা সেলিম ১০ একর জমির ওপর চন্দ্রমহল ইকোপার্ক নামে এই বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলেন। প্রথম থেকেই স্থানীয় দর্শনার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিল এই পার্কটি। দিন যত গড়াচ্ছে পার্কের সৌন্দর্য টেনে আনছে ভ্রমণপিপাসুদের। ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে গড়া চন্দ্রমহল, সুরুঙ্গ পথ, শিশুদের রাইডস, সারি সারি নারিকেল গাছ, নানা জাতের ফুল, লেকের মধ্যে রেস্টুরেন্ট, মনিষী ও গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবহনকারী বিভিন্ন ভাস্কর্য, দেশি-বিদেশি পশু-পাখি, কি নেই এখানে। এক কথায় পূর্ণাঙ্গ একটি বিনোদন স্থান চন্দ্রমহল ইকোপার্ক।

এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এই পার্কের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খেলনাসহ নানা ধরনের ২০টি দোকান। পার্ক মালিকের পক্ষ থেকে এসব দোকান করে দেওয়া হলেও বিনা ভাড়ায় ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয়রা। পার্ক ঘিরে প্রতিদিন অন্তত ৩০টি ভ্যান চলাচল করে এই এলাকায়। যারা শুধু পার্কের দর্শনার্থীদের বহন করে থাকেন। প্রত্যন্ত গ্রামের এই পার্কে সব ধরনের সুবিধা পেয়ে খুশি দর্শনার্থীরা।

মাগুরা থেকে আসা শিক্ষার্থী আসিক হোসেন বলেন, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরতে এসেছিলাম। সেখান থেকে বের হওয়ার পরে একজন জানালো একটি পার্কে তাজমহলের মতো একটি ভবন রয়েছে, তাই শুনে আসলাম। এখানে আসার পরে খুবই ভাল লেগেছে। ভবনটি ছোট হলেও অনেক আকর্ষণীয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি, ফুল ও সারি সারি নারিকেল গাছ আমাদের খুব ভাল লেগেছে।

খুলনা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসা নিলয় শিকদার বলেন, এই পার্কের সবকিছুই ভালো গেলেছে। তবে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে নেমে পার্কে আসার জন্য মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। যার অবস্থা খুবই খারাপ। ইটের রাস্তা হওয়ায় ভ্যানে আসতে খুব ঝাকি লাগে। রাস্তাটা যদি পিচ ঢালাই হত তাহলে অনেক সুবিধা হত। এছাড়া পার্কের ভেতরে নামাজের জায়গাটা খুবই ছোট, এটাকে বড় করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

শরণখোলা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবাদে বাইরে থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরার সুযোগ হয় না। ছুটিতে বাড়িতে এসে মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বাড়ির সবাইকে নিয়ে এসেছি চন্দ্রমহলে। নির্মল পরিবেশে ঘুরে সবাই খুব খুশি হয়েছে।

পার্কে ঘুরতে আসা রেহেনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কিছু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে প্রবেশ ফি অনেক বেশি, সেই সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু এই পার্কে প্রবেশ ফি যেমন সাধ্যের মধ্যে, তেমনি কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় না। তাই বার বার বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে এখানে বেড়াতে আসি।

পার্কের ভেতরে থাকা কসমেটিক্স ও খেলনার ব্যবসায়ী চন্দন কুমার দাস বলেন, পার্কের ভেতরে আমরা অনেকেই ব্যবসা করি। পার্কের মালিক সেলিম ভাই আমাদের এই দোকান করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেন না। এখানে বেচা-কেনা করে যা পাই তাতে আমাদের চলে যায়।

মো. রাসেল শেখ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এই পার্কটি এখানে হওয়ায় আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে অনেক ভালো আছি। পার্কটি এখানে হওয়ায় এলাকার অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ভালো আছি।

চন্দ্রমহল ইকো পার্কের ব্যবস্থাপক কাবুল শেখ বলেন, পার্কে আসা দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চন্দ্রমহল ভবন এবং অন্যান্য সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে দর্শনার্থীরা অনেক খুশি হয়। তবে মহাসড়ক থেকে পার্কে আসার জন্য যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি যদি পিচ ঢালা রাস্তা হত তাহলে আমাদের দর্শনার্থী আরও বৃদ্ধি পেত। আমরা সরকারকে আরও বেশি রাজস্ব দিতে পারতাম।

পার্কের উদ্যোক্তা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম হুদা বলেন, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদন চাহিদা মেটানোর জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এমনভাবে পার্কটি সাজানো হয়েছে যে সব বয়সী মানুষ এখানে এসে মানসিক প্রশান্তি পায়। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও রুচির কথা চিন্তা করে আমরা পার্কে প্রবেশ ফি সামান্য রেখেছি।

এছাড়া ভেতরের দোকানিদের কাছ থেকে যেহেতু আমরা ভাড়া নেই না, সে কারণে তারাও তাদের পণ্য দর্শনার্থীদের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে থাকেন। ভবিষ্যতে দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটিকে আরও বেশি মনোমুগ্ধকর করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
 
 বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।