রাজবাড়ী: চোখ জুড়ানো দিগন্ত বিলে গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রংয়ের পদ্ম ফুলের উঁকি। ফোটা পদ্ম কিংবা নতুন করে মাথা তোলা কুঁড়িগুলোর মিলন মেলায় মনের আনন্দে বিচরণ করে পানকৌড়ি আর ডাহুক।
বিলে ফুটে থাকা হাজারো পদ্ম ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য মানুষকে খুব সহজেই আকর্ষণ করছে। এ ফুলটি খাবার হিসেবে এবং ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকের কাছেই প্রিয়। আবার অনেকের কাছে এটি বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক।
বুড়োর বিলে গত তিন দশক ধরেই বর্ষাকালে দেখা মেলে হাজারো পদ্ম ফুলের মিলন মেলা। এ ফুলের কারণেই গত দুই বছর ধরে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এটি মাঠবাড়িয়ার পদ্মবিল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপরূপ এ বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
সরেজমিনে বিলটি ঘুরে দেখা যায়, কয়েক একর পতিত জমিতে হাজার হাজার গোলাপি পদ্ম ফুল ফুটে আছে। পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসছেন। দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুড়োর বিলে। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা স্মৃতি ধরে রাখতে মুহুর্তগুলো করে রাখছেন ক্যামেরাবন্দি।
শুরুর দিকে এ বিলে ঘুরতে এসে দর্শনার্থীরা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যেতেন। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
বালিয়াকান্দি থেকে ঘুরতে আসা সুরজ মণ্ডল নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বুড়োর বিলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি এখানে নাকি অনেক আগে থেকেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্ম ফুল ফোটে। কয়কজন বন্ধু বিলে পদ্ম ফুল দেখতে এসেছি। বিলের দৃশ্য সত্যি নয়নাভিরাম।
রাজবাড়ী শহর থেকে আসা মোস্তফা মুন্সি বলেন, এ বিলটি স্থানীয়দের কাছে বুড়োর বিল নামেই পরিচিত। বিলে প্রতি বছর অসংখ্য পদ্মফুল ফোটে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। আমিও পদ্ম ফুলের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি।
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা রকিবুল হাসান বলেন, বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু এখানে আসার রাস্তাটি ভালো না। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে আরও অনেক পর্যটক আসবেন। আমি জন্মের পর থেকেই এ বিলে পদ্ম ফোটা দেখছি। এটাকে অনেকে বুড়োর বিল বললেও আমরা পদ্মবিলই বলি।
রাজবাড়ী জজ কোটের আইনজীবী অভিজিৎ সোম বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়ার বিলটি স্থানীয়দের কাছে বুড়োর বিল নামে পরিচিত। এ বিলে প্রতি বছর অসংখ্য পদ্ম ফুল ফোটে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। আমিও পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে।
তিনি আরও বলেন, তবে বিলে আসার জন্য রাস্তাটির অবস্থা ভালো নেই। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নৌকারও ব্যবস্থা নেই। নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে ছবি তুলতে পারতেন। পাশাপাশি স্থানীয়রা নৌকা চালিয়েও অর্থ উপার্জন করতে পারতেন। নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা খালি পায়েই যতদূর সম্ভব বিলের মধ্যে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখে ফিরে আসছেন।
হান্নান শেখ নামে আরেক দর্শনার্থী জানান, তিনি পাবনা থেকে এখানে তার এক আত্মিয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। গত কয়েক বছর আগে এ বিলে পদ্ম ফুল দেখার পর থেকে তিনি প্রতি বছর বর্ষার সময় এখানে আসার চেষ্টা করেন। গত বছর আসতে পারেননি। এবার এসে একসঙ্গে এতো ফুল দেখে তিনি খুবই আনন্দিত। তবে বিলে নৌকার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো লাগতো বলেও জানান তিনি।
গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, আমি জন্মের পর থেকেই এ বিলে পদ্ম ফুল ফোটা দেখছি। অনেকেই এটাকে বুড়োর বিল বলে। এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহীল হাসান জানান, পদ্ম একটি জলজ উদ্ভিদ। ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত তিন ধরনের পদ্ম ফুল দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে লাল পদ্ম, সাদা পদ্ম ও নীল পদ্ম। নীল পদ্ম যদিও দেখা যায় না বললেই চলে। সাধারণত নীল পদ্ম আমরা গল্প উপন্যাসে পেয়ে থাকি। একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেতো । কিন্তু বর্তমান সময় বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্ম ফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এ ফুল আমাদের জন্য অনেকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মীয় দিকে এবং ওষুধি গুণের কারণেও অনেক গুরুত্ব বহন করে।
তিনি আরও জানান, বুড়োর বিলে যে পদ্ম ফুল পাওয়া যায়, এটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। তাই দর্শনার্থীরা যেন ফুল ছিড়ে সৌন্দর্য নষ্ট না করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের নষ্ট করা উচিত না।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আম্বিয়া সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়া পদ্মবিলে গত দুই বছর ধরে হাজারো পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু সম্প্রতি ফুল ফুটতে শুরু করেছে, সেহেতু এখন পর্যন্ত পদ্ম ফুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ভবিষতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহন করা যায় কি না সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২২
এফআর