ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পাহাড়ে আলোক ‘বর্তিকা’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
পাহাড়ে আলোক ‘বর্তিকা’

রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে ফিরে: এক সময়ের মহকুমা জনপদ রামগড় এখন উপজেলা শহর। অনেক মহকুমা শহর জেলায় উন্নীত হলেও রামগড়ের হয়েছে অবনতি।

নানা কারণে সমৃদ্ধ এই পাহাড়ি জনপদ বরাবরই রয়েছে পিছিয়ে। এ পিছিয়ে পড়া জনপদকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে একদল যুবক। তাদের প্রচেষ্টা সৃজনশীল ও বুদ্ধিভিত্তিক। তারা মনে করে বই পড়া আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি সমাজকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। একটি সমাজকে আলোকিত করে এগিয়ে নিতে বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।  

এমন বোধ ও চিন্তাকে ধারণ করে সমৃদ্ধ এ পাহাড়ি জনপদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল তরুণ ২০২১ সালের ২৮ মে পার্বত্য খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায়, ‘তোমার সমাজ আঁধার হলে তুমি হও বর্তিকা’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা করে বই পাঠ বিষয়ক প্রচেষ্টা ‘বর্তিকা’। এ পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনপদের মানুষদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই যার মূল লক্ষ্য।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এসব তরুণের স্বপ্ন শুধু তাদের জন্ম জনপদ রামগড় তাদের বই পাঠের কর্ম প্রয়াস একটা সময় দেশের পুরো পাহাড়ি জনপদে ছড়িয়ে পড়বে। বইয়ের আলোয় আলোকিত হবে এসব পিছিয়ে পড়া সমাজ।  

বর্তিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, শহরাঞ্চলে একটা বই যেমন সহজলভ্য সেটা আমাদের এ পাহাড়ি এলাকায় খুব দুষ্প্রাপ্য। একাডেমিক বইগুলো পাওয়া গেলেও অন্যান্য বইগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না। তাছাড়া বই কিনে পড়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা পাহাড়ি জনপদের খুব বেশি মানুষের নেই। এ ভাবনা থেকে জ্ঞানপিপাসু মানুষের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ।
 
তিনি বলেন, আমরা যারা এটির পরিচালনা করছি তারা সবাই এখনো ছাত্র। তাই কিছু প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। আমরা আমাদের সদস্যদের নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আশা করছি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এটিকে ভালো একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবো।

নিজেদের ফোকাস পয়েন্ট নিয়ে পারভেজ বলেন, আমাদের প্রধান ফোকাস হচ্ছে যারা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে তাদের নিয়ে। আগামী প্রজন্মকে একটি সৃজনশীল ও মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এর ফলে ফলাফল হয়তো আমরা এখন থেকেই পেতে শুরু করেছি, যেমন আপনি জেনে অবাক হবেন যে আমাদের লাইব্রেরি থেকে ক্লাস ফাইভ-সিক্সের ছেলে মেয়েও বই নিয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারটি অসাধারণ।

যেভাবে কাজ করে বর্তিকা:

কামরুল হাসান মারুফ ও ফয়সাল কবির জিকু এ দুইজনের উদ্যোগে রামগড় উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসের একটি সুদৃশ্য স্থানে রাখা থাকে বইগুলো। সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে বই নিয়ে পড়েন পাঠকরা। পাঠ শেষে আবার সেখানেই রেখে যান। একদম বিনামূল্যে পাঠকরা এখান থেকে বই নিয়ে পড়ছেন।  

বর্তিকার প্রতিষ্ঠাতারা বলেন, রি-ভাইব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার বর্তিকার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এবং সব সময় বর্তিকার পাশে ছিলেন।

বর্তিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পারভেজ বলেন, রি-ভাইবের এ শোরুমে অনেকগুলো বই স্টোর করা থাকে। সেখান থেকে পাঠকরা তাদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি অ্যান্ট্রি করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বই নিয়ে যায়। আমাদের ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে সেখানেও পাঠকরা তাদের পছন্দের বইয়ের কথা জানিয়ে বই নিয়ে পড়েন।

যেভাবে সংগ্রহ হয় বই:

বর্তিকার আরেক সংগঠক মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের সংগ্রহের প্রধান উৎস মানুষের ডোনেশন। পাশাপাশি আমাদের সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে বই সংগ্রহ করে থাকি। সংগ্রহ করা সেই পই পড়তে পারে যে কেউ। পড়ার পাশাপাশি যে কেউ ইচ্ছে করলে অন্যদের পড়ার জন্য বই দিয়েও যেতে পারেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার বিত্তবানরা ইচ্ছে করলেই বর্তিকার জন্য পই পাঠাতে পারেন। অথবা করতে পারেন অর্থ সহায়তা।  

পাঠক দিন দিন বাড়ছে:

বর্তিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান পারভেজ বলেন, আমাদের বর্তমান মৌলিক বই সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। গত এক বছরে প্রায় ২০০ জন পাঠক ৫৫০ বার বই পড়ার জন্য নিয়ে গেছেন। প্রতি মাসে প্রায় ১২০-১৫০টি বই বিভিন্ন পাঠক পড়েন।  

এ প্রসঙ্গে কথা হয় রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানের সঙ্গে। আশিক বলেন, ‘আমরা থাকি পাহাড়ি জনপদে, আমাদের মা-বাবা আমাদের ক্লাসের বই পত্রই কিনে দিতে পারেন না, সেখানে গল্প-উপন্যাসের বই পাব কোথায়। বর্তিকার উদ্যোগে আমরা বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারি। এমন উদ্যোগের কারণে আমরা উপকৃত হচ্ছি।

বর্তিকার আরও কার্যক্রম:

বই পাঠের এই কার্যক্রম ছাড়াও বর্তিকা আরও কিছু কাজ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে একাডেমিক বই বিতরণ কর্মসূচি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো এবং বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার জন্য বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আলোচনার আয়োজন করা।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।