-আজ আমাদের রুমে প্রথম যে পুরুষটি ঢুকবে তাকেই আমি বিয়ে করব— রুনুকে বলল সীমা।
-হুম! বললেই হলো।
-যেই আসুক। তার সাথেই প্রেম করব। ’ বলল সীমা।
ওরা দুজন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে প্রায় তিন বছর। এতটা সময় ধরে দুজন এক রুমে। বলতে গেলে দুজনেই দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। কদিন আগে সীমার বয়ফেন্ড বিয়ে করেছে অন্য এক মেয়েকে।
এর আগে অবশ্য সীমাকে অনেক করে বুঝিয়েছে ওর বয়ফ্রেন্ড। কেন সে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। অবশেষে নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়েছে সীমা। কিন্তু মানতে পারেনি রুনু।
তাই বিয়ের আগে মাঝে মাঝেই রুনু সীমাকে বলত, ‘চল তোর সজিবের বাড়ি যাই। ওর বাবা-মার কাছে তোদের সম্পর্কের কথা বলি। অ্যাটলিস্ট ওর মুখোশটা তো খুলে যাবে। ’
‘তাতে লাভ?’ কঠিনভাবে উত্তর দেয় সীমা। প্রশ্নের উত্তরের মতোই কঠিন আর দৃঢ় স্বভাবের মেয়ে সীমা। তাকে টলানো কঠিন। তাই হাল ছেড়ে দেয় রুনু।
সান্ত্বনার বাণীর মতো করে সীমার মাথায় হাত রেখে বলে, ‘চিন্তা করিস না, ‘মার দুজন বন্ধুর একজনকে তোকে দিয়ে দেব। ’
আজ শুক্রবার। ভার্সিটি বন্ধ। গতরাত ৩ টা পর্যন্ত সিনেমা দেখে সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে দুজন। দুজনেরই একসঙ্গে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা, সঙ্গে অবশ্য রুনুর বয়ফেন্ডও থাকবে।
রুনুর বয়ফেন্ডের নাম নীল। রাতেই নীলকে বলে রেখেছিল রুনু। সীমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য যেন কাউকে যেন নিয়ে আসে। সকালে উঠে আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ফোনের বাটন টিপকে টিপতে বলছিল সীমাকে, ‘তোর হঠাত এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় এলো কেন রে...’
-কাল রাতে স্বপ্ন দেখেছি। আমাদের ঘরে সুন্দরমতো একজন পুরুষ ঢুকছে। কী করে যেন তার সঙ্গে আমার ভাব হয়ে গেল।
সীমা স্বপ্নের গভীরে যাওয়ার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে রুনু বলে, ওকে। যাহ! যদি আজ কোন পুরুষ আমাদের ঘরে ঢোকে তাহলে তার সাথে প্রেম করতে আমিই তোকে সাহায্য করব। কথা দিলাম।
একটু যেন খুশি হয়েই সীমা বলল, পাক্কা।
-পাক্কা। কিন্তু...
-কিন্তু কি?’ সীমার প্রশ্ন।
-যদি আমাদের দারোয়ান কাকা আসে। তাহলে কিন্ত বিয়ে উপলক্ষে মিষ্টি না চাইনিজ খাওয়াতে হবে...’ বলেই হো হো করে হেসে দেয় রুনু।
-দারোয়ান কাকা এলেও তাকেই জীবন সঙ্গী করে ফেলব। ’ সীমার এই কথায় যেন থমকে গেল রুনু।
অবাক চোখে রুনুর প্রশ্ন, তুই কি সিরিয়াস সীমা?
-একশত ভাগ সিরিয়াস, তুই সাহায্যে করবি না বল?
-অবশ্যই করব। কেন নয়। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই তোদের বিয়ে দেব।
-কথা দিচ্ছিস তো?’ সীমার প্রশ্ন।
ক্লাস থ্রিতে পরার সময় রুনুর মা মারা যায়। তারপর থেকে বাবার আদরেই মানুষ হয়েছে রুনু। রুনুর কথা ভেবে তার বাবার আর বিয়ে করা হয়নি। তখন থেকে বাবার আদর্শেই নিজেকে তৈরি করছে রুনু। তবে বাড়িতে মা না থাকায় মনের কোথায় যেন একটু স্বার্থপরতা লেগে গেছে।
বাবাকে ছেড়ে কোনভাবেই হলে থাকতে চাইনি রুনু। অনেক বুঝিয়ে তাকে হলে পাঠানো হয়। হলে ওঠার পর একবারও আসেননি রুনুর বাবা। বাবাকে আসতে বললেই কেবলই বলত, দেখিস। হঠাৎ করে ঠিক একদিন চলে যাবো। অবাক হয়ে যাবি।
অবশ্য তার আর সীমার বন্ধুত্বের কথা প্রায়ই বাবাকে শোনাতো রুনু।
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অনেকখানি অটল রুনু। এটাও অবশ্য হয়েছে বাবার কারণেই। তাই একটু ভেবে বলে, কথা দিলাম। আর যদি কথা না রাখতে পারি তাহলে আমার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
-আফনেরা গোসল দিবেন না? পানি চইল্যা গেলে কইলাম আমি পাঁচ তলাথ্যুন পানি আনতাম ফারছি না” এক পশলা সিরিয়াস কথা হয়ে যাবার পর খালার কথায় দুজনেই স্তম্ভ ফিরে পেলেন।
এবার গোসল নিয়ে দুজনের টানাটানি। সীমার কথা আমি আগে যাবো। রুনু তো বাথরুমের দরজার সামনে দরজা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে করেই হোক সেই আগে যাবে।
গোসল আর দুপুরের খাবার শেষে দুজনেই ফেসবুকে চ্যাট করল কিছুক্ষণ।
এরপর নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এরমধ্যে প্রায় পাঁচটা বেজে যায়। হাতের ভ্যানিটি ব্যাগটা ঠিক করছিল রুনু। এদিকে ঠোকে লিপস্টিক মাখাতে ব্যস্ত সীমা।
দরজায় একটু কড়া নেড়েই ভেতরে ঢুকে পড়ে একজন ভদ্রলোক, বয়স ৪৫, বা তার কাছাকাছি। প্রথমেই তাকে চোখে পড়ে সীমার।
-কে আপনি? এই প্রশ্ন করে তাকিয়ে যেন পাথর হয়ে গেলো রুনু।
সামনে স্বয়ং তার বাবা।
কি করবে রুনু?
নিজের বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে গিয়ে বান্ধবীকে মা হিসেবে গ্রহণ করবে নাকি প্রতিবাদ, মনের মধ্যে এই দুই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে শুধু।
নিজের মনের সাথে অনেক বার যুদ্ধ করে অবশেষে বন্ধুতের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিল সে। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই নিজের প্রতি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রুনু।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৪