ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩১, ১৭ জুলাই ২০২৪, ১০ মহররম ১৪৪৬

ফুটবল

কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪
কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

লাউতারো মার্তিনেস গোল করে উদযাপন করলেন মাঠে। তিনি ছুটে গেলেন আরও একটি জায়গায়-বেঞ্চে বসে থাকা লিওনেল মেসির কাছে।

একটু আগেই যার কান্নায় ব্যথিত হয়েছিল পুরো দুনিয়া! সেই গোল তার মুখে তখন এনে দিল এক চিলতে হাসি।

আর্জেন্টিনার যখন কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। পথ খুঁজে দিতে পারছিলেন না কেউ, তখন আরও একবার তাদের শিরোপার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এমন একজন- যার নিজের পথই ছিল বেশ বন্ধুর। প্রথমার্ধ, নির্ধারিত সময়ের ইতি, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে শেষের পর এসেছে লাউতারোর সেই গোল।

কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচে হার্ড রক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়াকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময় শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আর্জেন্টিনার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন লাউতারো।

ম্যাচ শুরুর এক মিনিটের মধ্যেই সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। তবে গনসালো মন্তিয়েলের দেওয়া ক্রস থেকে হুলিয়ান আলভারেস বক্সের মাঝে থেকে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি। বাঁ দিক দিয়ে বল উড়ে চলে যায়। পঞ্চম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন কলম্বিয়ার লুইস দিয়াস। সেটি সহজেই ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।  

দুই মিনিট পর সান্তিয়াগো আরিয়াসের হেড থেকে উড়ে আসা বল বক্স থেকে শট নেন জন করদোবা। তবে তার ডান পায়ের শট বাঁ দিকের পোস্টে লাগে। চাপ বাড়িয়ে খেলতে থাকা কলম্বিয়া ত্রয়োদশ মিনিটে সুযোগ পায় আবারও। তবে জেফারসন লারমার হেড থেকে আসা বল কার্লোস কুয়েস্তা বক্সের মাঝ থেকে শট নিলে সেটি ঠেকিয়ে দেন এমি মার্তিনেস।

২০তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। বাঁ দিক থেকে আক্রমণে গিয়ে বক্সে বল বাড়ান আনহেল দি মারিয়া। বক্সের মাঝামাঝি একা থাকলেও ক্রস থেকে আসা বলে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি মেসি। অনায়াসে তালুবন্দি করে নেন গোলরক্ষক। ৩৩তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পায় কলম্বিয়া। তবে জেফারসন লেরমার দূর থেকে নেওয়া বুলেট গতির শট ঠেকিয়ে দেন মার্তিনেস।

দুই মিনিট পর আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। সতীর্থের পাস থেকে আসা বল বক্সে কয়েকজনকে কাটিয়ে গোললাইনে গিয়ে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন মেসি। তবে আরিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাটিতে গড়াতে দেখা যায় তাকে। পরবর্তীতে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট নিয়ে খেলা শুরু করেন পুনরায়।

৪৪তম মিনিটে বক্সের কাছে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। ১২ গজ দূর থেকে নেওয়া মেসির শট নিকোলাস তালিয়াফিকো হেডে ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ড্র নিয়েই বিরতিতে যায় দুদল।

বিরতির পর খেলতে নেমে আগের মতোই আর্জেন্টিনাকে চাপে রাখে কলম্বিয়া। ৪৭তম মিনিটে করদোবার হেড থেকে আসা বল ভলিতে জালে পাঠানোর চেষ্টা করেন আরিয়াস। তবে সেটি বাইরে দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে শট নেন দি মারিয়া। তবে সেটি ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক।  

৫৪তম মিনিটে সুযোগ পায় কলম্বিয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল করদোবার হেডে চলে যায় ডেভিনসন সানচেসের কাছে। তার করা হেডে বল অবশ্য পোস্টের খানিক ওপর দিয়ে উড়ে চলে যায়। ৫৮তম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে গিয়ে শট নেন দি মারিয়া। যদিও সেটি ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক।  

গোড়ালির যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলেন না মেসি। শেষ পর্যন্ত নিজেই ইঙ্গিত দেন মাঠ ছাড়ার। ৬৫তম মিনিটে তার বদলি হিসেবে নামানো হয়ে নিকো গনসালেসকে। পরবর্তীতে ক্যামেরায় দেখা যায় বেঞ্চে আবেগী হয়ে পড়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। কাঁদতে থাকেন অজোরে।

৭৫তম মিনিটে বল জালে পাঠায় আর্জেন্টিনা। তালিয়াফিকোর দারুণ এক পাস বক্স থেকে লক্ষ্যভেদ করেন নিকো গনসালেস। তবে ততক্ষণে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। ৭৯তম মিনিটে হামেস রদ্রিগেসের ফ্রিকিক থেকে আসা বল হেড নেন কুয়েস্তা। তবে সেটি ডান দিক দিয়ে চলে যায়। শেষদিকে বেশ কয়েকটি আক্রমণ সাজায় আলবেসিলেস্তেরা। তবে জালের দেখা আর পায়নি। পরে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

৯৫তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। আক্রমণে গিয়ে দি মারিয়া বক্সে বল বাড়ান রদ্রিগো দে পলকে। তার দেওয়া দারুণ পাস গনসালেস শট নিলেও সেটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান কলম্বিয়া গোলরক্ষক। ১০২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শট নেন আরিয়াস। তবে আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ওপরে ওঠা বল তালুবন্দি করে নেন এমি মার্তিনেস।

১০৮তম মিনিটে ডান দিক থেকে আক্রমণে গিয়ে বক্সে বল বাড়ান দি মারিয়া। তবে দারুণ এই ক্রস পায়েই লাগাতে পারেননি লাউতারো। পরের মিনিটেই আক্রমণে যায় কলম্বিয়া। তবে মিগুয়েল বরখার ডান পায়ের জোরালে শট ঠেকিয়ে দেন লিসান্দ্রো।  

১১২তম মিনিটে গিয়ে ডেডলক ভাঙেন লাউতারো। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে গিয়ে বদলি হয়ে নামা লো সেলসো বল বাড়ান বক্সে, সেখান থেকে দারুণ এক শটে কলম্বিয়া গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে বল পাঠান ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। আসরে এ নিয়ে ৫ গোল করেছেন তিনি।  

তিন মিনিট পর দে পলের সঙ্গে সংঘর্ষে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে জটলার মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। রেফারি এসে সেটি থামিয়ে দেন। পরবর্তীতে আর কোনো গোল না হওয়ায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।