ব্রাজিল: জোহানেসবার্গ থেকে টোকিও, অকল্যান্ড থেকে টরন্টো, গোটা গ্লোবের ফুটবল-বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। ঘণ্টা-মিনিটের কাউন্টডাউন শেষে বৃহস্পতিবার সাও পাওলোতে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের মহাধুমধাম।
কেমন আছেন ব্রাজিলের বাংলাদেশিরা, ভালো-মন্দের দিনলিপিতে কি তাদের প্রাপ্তি, সমস্যা-সম্ভাবনার কথা জানতে বিভিন্ন শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। তাদের কেউ হয়তো গত বছর ব্রাজিলে এসেছেন পার্শ্ববর্তী দেশ বলিভিয়া হয়ে, আবার কেউ হয়তো ২০-২৫ বছর ধরে আপন নিবাস করে নিয়েছেন পেলে-নেইমারের দেশকে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকার সমন্বয়ে গড়া আন্তঃমহাদেশীয় অর্থনৈতিক ফোরাম BRICS (ব্রিক্স)-এর অন্যতম দেশ ব্রাজিলকে সুদূরপ্রসারী টার্গেট করেই দু’বছর আগে রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্রাসিলিয়াতে ৫শ’র মতো বাংলাদেশির বসবাস। শিল্পনগরী পারানা ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার দেড়েক আর বাণিজ্যিক রাজধানী সাও পাওলোতে বসবাস আরো প্রায় হাজার খানেক বাংলাদেশির। বাকিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন পুরো ব্রাজিল জুড়ে, এমনকি অনেক প্রত্যন্ত জনপদেও।
ঢালাও ইমিগ্রেশনের তেমন কোন সুযোগ না থাকায় ‘এসাইলাম’ তথা রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাধ্যমেই দেশটিতে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন শতকরা ৯৯ ভাগ বাংলাদেশি। তার অর্থ এই নয় যে, সবাই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত হয়েছেন। আবেদন করা মাত্র বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা গৃহীত হয় বিবেচনার জন্য এবং নিষ্পত্তি হতেই চলে যায় ৪ থেকে ৫ বছর। ইউরোপের মতো ব্রাজিলীয় প্রশাসনও খুব ভালো করেই জানে, বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা যেসব কারণ দেখান, নিরানব্বই ভাগেরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, তথাপি মূলতঃ মানবিক কারণেই তাদের আবেদন ‘টেবিল রিজেক্ট’ না করে অমীমাংসিত রেখে দেয়া হয়।
আংশিক রিফিউজি কার্ডধারী বাংলাদেশিরা এ সময়ের মধ্যেই সুযোগ খুঁজে নেন ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বৈধ হবার। ব্রাজিলে বসবাসরত ৪ হাজার বাংলাদেশির এক পঞ্চমাংশ ইতিমধ্যে এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় রেসিডেন্স কার্ড হাতে পেয়েছেন। কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের জন্য চুক্তিভিত্তিক পাত্রীকে ইউএস ডলারের হিসেবে ১ থেকে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্যাশ পেমেন্ট করতে হয়।
ব্রাসিলিয়ার ৫শ’ বাংলাদেশির মাঝে হাতে গোনা কয়েকজনের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থাকলেও অধিকাংশই বিভিন্ন শিল্পকারখানায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। রাজধানীতে প্রভাবশালী বাংলাদেশি আছেন একেবারেই হাতেগোনা মাত্র দু’জন। প্রফেসর আমিরুল ইসলাম ব্রাসিলিয়ার স্থানীয় সরকারের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা। অন্যজন কোটিপতি ব্যবসায়ী তারেক, যিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন ব্রাজিলীয় রাজধানীতে।
চাকরির জগত থেকে দূরে থেকে যারা ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তারাই খুব ভালো আছেন অর্থনৈতিকভাবে। নিয়ম অনুয়ায়ী, ব্রাজিলিয়ান প্রভাবশালী লোকজন মেলা বা বাজারের ইজারা নিয়ে থাকে প্রশাসনের কাছ থেকে এবং তাদের কাছ থেকেই ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য বিশেষ মূল্যে পোস্ট কিনে নিতে হয় বাংলাদেশিদের। আলাদা করে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় না।
পার্টনারশিপে ব্যবসা করলে চোখ বন্ধ করেই মাস শেষে আসে মিনিমাম ১ হাজার ইউএস ডলার আর অংশীদারিত্ব বাদ দিয়ে চোখ-কান খোলা রেখে একক ব্যবসায় মাসে ১০ হাজার ইউএস ডলারও খুব কঠিন নয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে ৯ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। শুধু সাত সমুদ্র তের নদী নয়, দেশটিতে আসতে মহাসাগরও পাড়ি দিতে হয় বাংলাদেশিদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪