ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা ১০ গোল

ওয়ার্ল্ড কাপ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪
বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা ১০ গোল

ঢাকা: রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের ফাইনাল। আর শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি।



দু’দলেই রয়েছেন লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েন, মিরোস্লাভ ক্লোসা ও থমাস মুলারের মতো বিশ্বসেরা স্ট্রাইকার। এদের কেউ কেউ ফাইনালে গোল করে ফুটবল ইতিহাসে নিজের নামটি চিরতরে খোদাই করে রাখবেন।

ফুটবল বোদ্ধাদের মতে বিগত ১৯টি বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা ১০টি গোল পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য। (শুধুমাত্র বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলগুলিকেই এ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে)

১০. জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), ২০০৬
ইতারি বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোলটি করেছিলেন জিজু। পেনাল্টি গোল হলেও ‍তা সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলে জায়গা করে নেয় বিশেষ কারণে। অন্যতম সেরা গোলরক্ষক জিয়ানলুইগি বুফনকে রীতিমতো বোকা বানিয়ে তার মাথার ওপর দিয়ে উদ্ধত চিপ তুলে দেন জিদান।
10_Zidane
গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে তুলে দেওয়া বলটি প্রথমে বারে লেগে গোলবারের ভেতরে পড়ে আবার তা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে, ততক্ষণে মাটিতে শুয়ে পড়া বুফন উঠে এসে বলটি তালুবন্দী করেন। ইতালিয়ান খেলোয়াড়েরা দাবি করেন গোল হয়নি। কিন্তু প্রথমবার ক্রসবারে লেগে বরটি গোললাইন অতিক্রম করে গোলবারের ভেতরে ড্রপ পড়েছিলো।

০৯. মার্কো তারদেল্লি (ইতালি), ১৯৮২
’৮২ সালে ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে তারদেল্লির এই গোলটি বিশ্বখ্যাত হয়ে আছে ইতালিয়ান এই মাঝমাঠের তারকার বুনো গোল উদযাপনের কারণে। তাই বলে তার গোলটিকে কোনোভাবে খাটো করা যাবে না।
09_Marco
তারদেল্লির জোরালো শট জার্মান গোলরক্ষক হেরাল্ড শুমাখারকে পরাস্ত করে ইতালিকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেয়। ডিবক্সের বামদিকের বাইরের কোনায় বল পেয়ে একইসঙ্গে ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোলবারে ডানপাশের বার ঘেঁষে নেওয়া তার শট অন্যতম সুন্দর গোলে পরিণত হয়।

আর এ গোলের পরই মার্কো তারদেল্লি বুনো উদযাপনে মেতে ওঠেন। তার এই উদযাপন দৃশ্য ইতালিয়ান দর্শকদরে মনে আজো রোমাঞ্চ জাগায়। ম্যাচ শেষে পশ্চিম জার্মানি ৩-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।

০৮. হেলমাট রান (পশ্চিম জার্মানি), ১৯৫৪
হাঙ্গেরির বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া জার্মানি ম্যাচে খেলার ৬ মিনিট বাকি থাকতে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায়। হেলমাট রান ম্যাচে তার দ্বিতীয় গোলটি করে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গ্লানিতে ডুবে যাওয়া পশ্চিম জার্মানিকে আনন্দের সাগরে ভাসান।
08_Helmut
ডিবক্সের বাইরে বল পেয়ে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে বামপাশের বার ঘেঁষে নেওয়া তার শট হাঙ্গেরির জাল খুঁজে পায়। তৎকালীন ফুটবলে হাঙ্গেরি সবচেয়ে শক্তিশালী দল। টানা কয়েকবছর সবকিছু জিতে চলা হাঙ্গেরি বিশ্বকাপ ফাইনালে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও পরাজিত হয়।

হাঙ্গেরিকে হারানো এই ম্যাচটি ফুটবলে ‘দ্য মিরাকল অব বার্ন’ ন্যামে খ্যাত। পরবর্তীতে এ ম্যাচটি নিয়ে ‘দ্য মিরাকল অব বার্ন’ নামে একটি বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।  

০৭. রোনালদো, দ্বিতীয় গোল (ব্রাজিল), ২০০২
ফাইনালের আগে কোনো গোল হজম না করা অলিভার কানের জার্মানির বিপক্ষে জোড়া গোল করে ব্রাজিলকে শিরোপা এনে দেন ফুটবলের ফেনমেনন খ্যাত রোনালদো।
07_Ronaldo
জাপানের ইয়োকোহামায় আয়োজিত ফাইনালে তার দ্বিতীয় গোলটির মাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলের লিজেন্ডে পরিণত হন রোনালদো। মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে এসে জার্মানির ডিবক্সের সামনে ডেলিভারি দেন ক্লেবারসন। রিভালদো বলটি রিসিভ করার ভঙ্গি করে না ছুঁয়েই ছেড়ে দিলে বলটি চলে যায় রোনালদোর পায়ে।

চুম্বকীয় কায়দায় ডান পায়ে বলটি রিসিভ করে জার্মান গোলরক্ষক অলিভার কানকে পরাস্ত করেন রোনালদো। ডানপাশের গোলবারের দিকে ধেয়ে যাওয়া বলটি চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না অলিভার কানের।

ফাইনাল ম্যাচে রোনালদোর কাছে দুবার পরাস্ত হলেও সেই আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো গোলরক্ষক হয়ে গোল্ডেন বল জেতেন অলিভার কান। গোলবারের নিচে অপরাজেয় অলিভার কানের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সের ওপর ভর করেই ফাইনালে আসে জার্মানি।

০৬. মারিও কেম্পেস (আর্জেন্টিনা), ১৯৭৮
আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে অবদান রাখা মারিও কেম্পেসের এই গোল যুগোত্তীর্ণ হয়ে আছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফাইনালের প্রথমার্ধে করা তার প্রথম গোলটি পরিশোধ করে ডাচরা।
06_Mario
ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ইতিহাস সৃষ্টি করা গোলটি করেন কেম্পেস। ডিবক্সের বাইরে পাওয়া বলটি নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে গোলবারের শট নেন। কিন্তু ডাচ গোলরক্ষক বলটি আটকে দিলেও, বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। পেছন দিকে ফের ছুটে এসে সেই বলটি ডিফেন্ডারদের জটলার ভেতর থেকে জালে জড়ান মারিও কেম্পেস।

০৫. ইমানুয়েল পেতিত (ফ্রান্স), ১৯৯৮
স্মরণীয় এই গোলটি করার আগ মুহূর্তে নিজেদের ডিবক্সের ভেতরেই ছিলেন এমানুয়েল পেতিত। ব্রাজিলের কর্নার কিক ডিবক্সের ভেতর থেকে ক্লিয়ার করে লম্বা টানে ব্রাজিলের ডিবক্সে কাছে নিয়ে যান প্যাট্রিক ভিয়েরা ও  দুগ্যারি।
05_Emmanuel
ভিয়েরার বাড়িয়ে দেওয়া বলটি ব্রাজিল ডিফেন্ডার কাফুকে গতিতে পরাস্ত করে ডিবক্সের বাম পাশের কোনা থেকে গোল করেন পেতিত। তার এ গোলেই ৩-০ তে এগিয়ে বিজয় উল্লাসে মাতে ফরাসিরা। এই মুহূর্তটির জন্যই যেন ফরাসিরা যুগের পর ‍যুগ ধরে অপেক্ষা করছিলো।
 
০৪. হোর্হে বুরুচাগা (আর্জেন্টিনা), ১৯৮৬
শেষ বাঁশি বাজার ঠিক ৬ মিনিট আগে মধ্যমাঠে বল পান দিয়েগো ম্যারাডোনা। চারপাশে পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড়েরা তাকে ঘিরে রাখলেও ঠিকই দুর্দান্ত এক পাস আক্রমণভাগে দাঁড়িয়ে থাকা বরুচাগাকে।
04_Jorge
দৌড়ে গিয়ে বলটি রিসিভ করে ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান হোর্হে বুরুচাগা। জার্মানির গোলরক্ষক হেরাল্ড শুমাখার এ নিয়ে পরপর দুবার ফাইনালে পরাস্ত হয়ে জার্মানদের বিশ্বকাপ স্বপ্নের ইতি ঘটান।
 
মেক্সিকো সিটিতে আয়োজিত ফাইনালে ম্যারাডোনার অসাধারণ পাস থেকে গোল করে বুরুচাগা ৩-২ গোলের ব্যবধানে জয় এনে দেন আর্জেন্টিনাকে।

০৩. গারসন (ব্রাজিল), ১৯৭০
’৭০ সালের ফাইনালে করা গারসনের এই গোলটি ইতিহাসে বিস্মৃত হলেও বিশ্বকাপ ফাইনালের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গোলটি ভুলে গেলে গারসনের প্রতি অবিচার করা হয়।
03_Gerson
১-১ সমতায় থাকা ম্যাচে গারসনের এই অদ্ভুত গোলের মাধ্যমেই ব্রাজিল ২-১ গোলে এগিয়ে যায়।

ডিবক্সের বাইরে থেকে বক্সের ভেতরে থাকা বেশ কয়েকজন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল করেন গারসন। তার এই গোলটি টুর্নামেন্টের সেরা গোল হিসেবেও বিবেচিত হয়।

০২. পেলে, প্রথম গোল (ব্রাজিল) ১৯৫৮
এই গোলটির আগেই ১৭ বছর বয়সী পেলে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষে গোল করে জয়ী করেন দলকে। এছাড়া একই টুর্নামেন্টে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিকও করেন ফুটবল সম্রাট। কিন্তু টুর্নামেন্টে দর্শকদের জন্য তার সেরা খেলাটি তুলে রাখেন ফাইনালের জন্য। ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে জোড়া গোল করে ব্রাজিলকে এনে দেন প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা।
02_Pele
জোড়া গোলের প্রথমটি হয়ে ওঠে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দরতম গোলের একটি। ডিবক্সের ভেতরে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ঘিরে থাকা অবস্থায় শূন্যের বলটি দারুণ দক্ষতায় রিসিভ করে সামনে থাকা আরেক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে ফ্লিক করে বল জালে জড়ান। খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকা গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েও বলটিতে হাতের ছোঁয়া  লাগাতে পারেননি।

অসাধারণ এই গোলে সুইডেনের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ব্রাজিল ৩-১ গোলে এগিয়ে নেন পেলে। পরে আরও একটি গোল করে ৫-২ গোলের ব্যবধানে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেন পেলে। ‍

০১. কার্লোস আলবার্তো (ব্রাজিল), ১৯৭০
বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা গোলটির জন্য আমাদের চলে যেতে হচ্ছে ১৯৭০ সালের ফাইনালে। মেক্সিকো সিটির এই ফাইনোলে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের ৮৬ মিনিটে পেলের কাছ থেকে ডি বক্সের ডান পাশের কোনায় বল পান অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তো।
01_Carlos
বক্সের ভেতরে থাকা ইতালির ৫ ডিফেন্ডার ও গোলবারের নিচে গোলরক্ষককে উপস্থিত রেখে শট করবেন এটাই হয়তো ভাবেনি ইতালিয়ান খেলোয়াড়েরা। কিন্তু না অধিনায়ক আলবার্তো জোরালো শটে ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে পরাস্ত করে দলের পক্ষে চতুর্থ গোল করে বিশ্বকাপের জুলে রিমে ট্রফিটা চিরতরে নিয়ে নেন।

অসাধরন ফিনিশিংয়ে কারণেই শুধু গোলটি স্মরণীয় নয়, একই সঙ্গে ধ্রুপদী বাজিলীয় খেলার উদাহরণও হয়ে আছে কার্লোস আলবার্তোর গোলটি।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।