ঢাকা: সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে বিপর্যয়ের ধকলটা কাটিয়ে উঠতে পারলো না ব্রাজিল। জার্মান বুলডোজারে পিস্ট হওয়ার ছাপ মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে বলেই কিনা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ শেষেও মাথা নুইয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ইউরোপীয় জায়ান্টদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে নিজেদের মাঠের বিশ্বকাপকে কেঁদে বিদায় দেওয়ার পর শনিবার রাতের এ ম্যাচে প্রিয় ফুটবলাররা সান্ত্বনার জয় তুলে নেবে বলে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধলেও এদিন রাতেও তাদের কান্নায় ভেসে বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে। ডাগআউটে বসে সতীর্থদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েও কোনো ফল পেলেন না সুপারস্টার নেইমার। মন খারাপ করে গন্তব্যে ফিরতে হয়েছে তাকেও।
বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ব্রাসিলিয়ার এস্তাদিও ন্যাসিওনাল স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ম্যাচের শুরুতেই সেলেকাওদের রক্ষণভাগে বেসামাল অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। খেলার শুরুতেই ব্রাজিলের রক্ষণভাগের ফাঁক গলিয়ে দুইবারের মতো বল জালে জড়িয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মুহূর্তে আরেকটি গোল আদায় করে জয়ের ব্যবধানটাই বাড়ায় ডাচরা। পুরো খেলায়ই বেশ কয়েকটি পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও কোনো গোল আদায় করতে না পারায় ৩-০ গোলে হেরে মাঠ ছাড়তে হয় অস্কার-লুইজ-সিলভাদের।
খেলার মাত্র মাত্র ৩ মিনিটের মাথায় উইঙ্গার অ্যারিয়েন রোবেনকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা ডি-বক্সের ভেতরে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় নেদারল্যান্ডস, হলুদ কার্ড পান সিলভাও। সে পেনাল্টি থেকে রবিন ফন পার্সির গোলের পর ১৬ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মাঝ থেকে দুর্দান্ত শটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন ডেলে ব্লাইন্ড। এর ফলে খেলার শুরুর দিকেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ডাচরা।
এর মধ্যে ৯ মিনিটের মাথায় পলিনহোকে ফাউল করায় হলুদ কার্ড হজম করেন ডাচ উইঙ্গার রোবেন।
পিছিয়ে থাকার পর ২১ মিনিটের মাথায় আক্রমণে যায় ব্রাজিল। উইলিয়ানের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দৌঁড়ে গিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন অস্কার। তবে তার সে শট রুখে দেন নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক সিলেসেন।
এরপর আবারও আক্রমণে যায় সেলেকাওরা ২৩ মিনিটেই লুইজ গুস্তাভোর বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে ডি-বক্স অতিক্রম করতে গেলে মাইকনকে ফিরিয়ে দেয় ডাচ রক্ষণভাগ।
২৯ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে অস্কারের ফ্রি-কিকে ডেভিড লুইজের নেওয়া হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
একইসময়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে রোবেনের বাড়িয়ে দেওয়া বল গুজম্যান সেলেকাওদের জালে জড়াতে চাইলেও তার ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩৬ মিনিটের মাথায় অস্কার বল নিয়ে ডি-বক্সের দিকে ঢুকে যেতে চাইলে তাকে অন্যায় পন্থায় বাধা দেন ডাচ ডিফেন্ডার গুজম্যান। এ কারণে রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখান।
এই ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকে মাইকনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডেভিড লুইজ শট নিলেও তা আটকে দেয় নেদারল্যান্ডসের রক্ষণভাগ।
এরপর পাল্টা আক্রমণে গিয়ে ৪১ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডাচ ফরোয়ার্ড ফন পার্সি দুর্দান্ত শট নিলে তা আকড়ে নেন জুলিও সিজার।
এরপর ফের ব্রাজিল পাল্টা আক্রমণে যায়। তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে অস্কারের নেওয়া দুর্দান্ত শট ফিরিয়ে দেয় ডাচ রক্ষণভাগ।
৪৪ মিনিটের মাথায় রন ভ্লারের ফাউলের সুবাদে ডি-বক্সের ডান কর্নারে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে শট নিলেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হন ম্যাক্সওয়েল।
ডাচদের ২ গোলের বিপরীতে পাল্টা আক্রমণে গিয়েও কোনো ফল না পাওয়ায় গোলশূন্য থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে স্বাগতিক ব্রাজিল।
বিরতির পর এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে নামে সেলেকাওরা। ব্রাজিলের পক্ষে লুইজ গুস্তাভোর জায়গায় বদলি হয়ে নামেন ফার্নান্দিনহো।
শুরুতেই আক্রমণে যায় ব্রাজিল। ৪৬ মিনিটের মাথায় উইলিয়ান বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে অফসাইডের ফাঁদে ধরা পড়েন ম্যাক্সওয়েল।
৫০ মিনিটের মাথায় গুজম্যানের বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে নেওয়া শটে রোবেন প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে চাইলে তা আটকে দেয় ব্রাজিলিয়ান রক্ষণভাগ।
রোবেনের শটটি আটকে গেলেও খানিকবাদেই গোলবারের ছয় গজের মধ্যে থেকেই হেড নেন জিওরজিনিও ভাইনালডাম। তবে তার হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৫৭ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের পলিনহোর জায়গায় খেলতে নামেন হার্নানেস।
৫৯ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করেন রন ভ্লার, তবে তার আগেই অফসাইডে ধরা পড়েন তার সতীর্থ ভাইনালডাম।
৬০ মিনিটের মাথায় অস্কারের বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি-বক্সের মাঝ থেকে ডান পায়ের শটে জালে জড়াতে ব্যর্থ হন রামিরেস।
৬২ মিনিটের মাথায় ডাচ ডিফেন্ডার ডেলে ব্লাইন্ড ব্রাজিলয়ান মাইকনকে ফাউল করলে ডি-বক্সের খুব কাছ থেকে ফ্রি-কিক নিয়ে বল জালে জড়াতে শট নেন লুইজ। তবে সে শট আকড়ে নেন সিলেসেন।
৬৮ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে ডি-বক্সের বাম পাশ দিয়ে এগোতে চাইলে ডেলে ব্লাইন্ড তাকে বাধা দেন। ব্লাইন্ডের অন্যায় বাধায় অস্কার পড়ে গেলেও সেটা তার ডাইভ ছিল মনে করে উল্টো তাকেই হলুদ কার্ড দেখান রেফারি, যদিও পরে ‘আহত’ হয়ে মাঠ ছাড়েন ব্লাইন্ড, তার জায়গায় খেলতে নামেন ডেরিল ইয়ানমাত।
৭১ মিনিটের মাথায় ভাইনালডাম বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যেতে চাইলে অফসাইডের ফাঁদে ধরা পড়েন ফন পার্সি।
৭৩ মিনিটের মাথায় রামিরেসের বদলি হয়ে খেলতে নামেন হাল্ক।
৭৫ মিনিটের মাথায় জো’র বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে জালে জড়াতে চাইলেও ব্যর্থ হন হাল্ক।
৭৯ মিনিটের মাথায় উইলিয়ানের কর্নার কিক থেকে পাওয়া বল ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে জালে জড়াতে চাইলেও অস্কারের সে শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৮৬ মিনিটের মাথায় রোবেনের নেওয়া কর্নার কিক থেকে গোলপোস্টের খুব কাছ থেকে ডার্ক কুয়াট হেড নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে ৯০ মিনিটের মাথায় ইয়ানমাতের পাসে ডি-বক্সের মাঝখান থেকে দুর্দান্ত শটে দলের পক্ষে তৃতীয় গোল উদযাপন করেন ভাইনালডাম।
ব্যস, ভাইনালডামের গোলের পর আর কারও জোরালো আক্রমণ করা হয়নি। পুরো খেলায় বেশ কিছু দুর্দান্ত আক্রমণ করেও গোল না পাওয়ায় একজন ভালো স্ট্রাইকারের অভাববোধ করেছে ব্রাজিল। সেলেকাওদের আক্রমণগুলো যখন বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন ডাগআউটে বসে থাকা নেইমারের কথা বারবার বলছিলেন খেলার ধারভাষ্যকাররা।
তবে, শেষ পর্যন্ত নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপে কেবল চতুর্থ স্থান নিয়েই আফসোসে চুল ছিঁড়তে হয়েছে লুইজ-সিলভা-অস্কারদের। এমনকি ডাগআউটে থাকা নেইমার ও লুইস ফিলিপ স্কলারিকেও।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৪