ঢাকা: মাঠের একটি অ্যাকশনের পর টেলিভিশনে স্লো মোশন। পাশাপাশি ছবিতে দেখানো হচ্ছিলো ব্রাজিল দলের ১৯ আর নেদারল্যান্ডসের ২০ নম্বর প্লেয়ারের প্রতিক্রিয়া।
ওই ছবিটি যেন ছিলো সেমিফাইনালের ব্রাজিল আর তৃতীয় স্থান ঠিক করার ম্যাচে যে ব্রাজিল তাদের মধ্যে পার্থক্যের প্রতিচ্ছবি।
মঙ্গল থেকে শনিতে পার্থক্য আসলে উনিশ-বিশ। কেউই মনে হয় আশা করেননি যে চারদিনের মধ্যে ব্রাজিল দলটি উল্টে-পাল্টে দেবে। বরং জার্মান ট্যাংকে বিধ্বস্ত ব্রাজিল আরেকটি ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে কতোটা কি করতে পারে সেটাই ছিলো দেখার বিষয়।
হোক দুর্ঘটনা, কিন্তু ৭-১ গোলে ধসে যাওয়ার চারদিনের মাথায় চ্যাম্পিয়ন একটা দলের ঘুরে দাঁড়ানো সত্যিই কঠিন। মানসিক বিপর্যস্ততা কাটিয়ে উঠতেই তো এই দলের দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।
সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও যে বর্তমান দলের কাছে বড় কিছু আশা করা যায়, এমন না। সমর্থকদের কাছে হয় তো ডাচদের কাছে খাওয়া তিনটি গোলই কিছুটা বিতর্কিত। কিন্তু ব্রাজিলিয়ানরা জাল খুঁজে পেলো কই! জার্মানির কাছে ‘সেভেন আপ’ ডিফিট একটা দুর্ঘটনা, কিন্তু হারটা মোটেই না। যেরকম নেদারল্যান্ডসের কাছে ব্রাজিলের পরাজয়টাও স্বাভাবিক, শুধু স্কোরলাইনে বাড়াবাড়ি কিছু ঘটেনি।
আসলে যে ব্রাজিল দলকে এই বিশ্বকাপে দেখা গেলো, তাদের কয়জনের গৌরবের হলুদ জার্সির উত্তরাধিকার হওয়ার যোগ্যতা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন এখন সমর্থকদেরও। নেইমার ছাড়া আর শুধু অস্কার, দিয়াগো সিলভা এবং ডেভিড লুইজই সেই ব্রাজিলের উত্তরাধিকার যে ব্রাজিলকে বছরের পর বছর সমর্থকরা তাদের হৃদয়ে রেখেছেন।
নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়েই ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল ব্রাজিল। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে যে কতো পার্থক্য সেটা ব্রাজিলিয়ানরাই এখন সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারছে।
মঙ্গলবার থেকেই তাদের অপেক্ষার শুরু কখন বাজবে বিশ্বকাপের শেষ বাঁশি। কারণ যে মারাকানায় ওই বাঁশির অপেক্ষায় তারা ছিলো, সেখানে সবকিছুর ব্রাজিলিয় আয়োজন হলেও যে দল দুটি ফাইনাল খেলছে তার একটি প্রতিবেশী কিন্তু মানসিক বৈরীর দেশ আর্জেন্টিনা, আর অন্যটি তাদের বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়া জার্মানি।
ফাইনালে এই জার্মানরা সবদিক থেকেই এগিয়ে। নিজেদের ডিফেন্সে শুধু সমাজতান্ত্রিক বার্লিন প্রাচীরই নয়, গোলপোস্ট রক্ষার জন্যও আছেন অতিমানবীয় নয়্যার। তাদের মিডফিল্ড আধিপত্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মান আধিপত্যের মতোই। আক্রমণভাগে গোলমেশিন মুলার যেমন, বুড়ো ক্লোসাও তেমন সমান কার্যকর।
গোলের প্রতিযোগিতায় অন্যরাও কম যান না। এমনকি নয়্যারও চেষ্টা করলে যেনো একটা গোল করে আসতে পারবেন। জার্মানরা কখনোই ব্যক্তি নির্ভর দল না, সব সময়ই তারা একটি পূর্ণাঙ্গ দল।
বিপরীতে মেসির দল ধীরে ধীরে একটি দল হিসেবে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণ করেছে। তারপরও তারা শেষ পর্যন্ত মেসি নির্ভরই এক দল। এটা যেমন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তেমনি সুবিধাও কিছুটা। মেসিকে নিয়ে প্রতিপক্ষের গবেষণায় অনেক সময়ই অন্য যে কারো হিরো হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে যদি মেসি কয়েক মুহূর্ত নিজের সেরা খেলাটা খেলতে পারেন তা হলেই তো বার্লিন প্রাচীরের ভেঙে পড়া।
কিন্তু জার্মানরা তাকে সেটা করতে দেয়ার সামান্য সুযোগও দেবে না। ডাচরা যেভাবে মেসিকে বোতলবন্দী করে রেখেছিল, সেরকম কিছু করতে জার্মান পরিকল্পনাটা হবে আরো তীক্ষè, আরো কার্যকর।
পর্তুগিজরা একসময় ব্রাজিল শাসন করলেও ব্রাজিলে নিজেদের ফুটবল রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতেই এসেছে জার্মানি। তার প্রমাণ তারা রেখেছে সব খেলাতেই। এখন সেই রাজত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সফল হলে বিশ্ব ফুটবলের ক্রাউন প্রিন্স হবেন লিওনেল মেসি। তা হলেই ৮৬’র ম্যারাডোনা তিনি, না পারলে ট্র্যাজেডির নায়ক; সেটাও ম্যারাডোনা, ১৯৯০ বিশ্বকাপের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৪