ঢাকা: বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫৪ গোল করেছেন তিনি। ক্লাবকে জিতিয়েছেন ২১টি শিরোপা।
কারো কারো কাছে বিশ্বকাপের চেয়েও উন্নত মানের টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগের এখন পর্যন্ত তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার গোল ৮৬ ম্যাচে ৬৭টি। সামনে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ৬৮ (১০৭) এবং রাউল গঞ্জালেস ৭১ (১৪২)।
স্পেনিশ লা লিগায় তার গোল ২৪৩টি। ২৫১ গোল নিয়ে সামনে রয়েছে শুধু স্পেনিশ তেলমো জারা।
টানা ৪টি ব্যালন ডি’অর জিতে গড়েছেন ইতিহাস। জিতেছেন অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ও অনুর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ শিরোপা।
একসঙ্গে এতো কীর্তি আর কোনো ফুটবলারই করে দেখাতে পারেননি। একজনই পেরেছেন তিনি লিওনেল মেসি।
বিশ্বের তাবৎ ফুটবল বোদ্ধা ও লিজেন্ডদের কাছে তিনি সেরাদের সেরা। তবুও কেউ কেউ তাকে সেরাদের সেরা মানতে নারাজ। তাদের যুক্তি মেসির পায়ে সব সাফল্য গড়াগড়ি খেলেও তিনি পেলে-ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ ট্রফি বগলদাবা করতে পারেননি।
এতো অর্জনও তার শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি বলেই হয়তবা মেসি পণ করেছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের শেষ সীমা দেখবেন, দেখাবেন তিনি। অন্তত একবার হলেও সোনালি ট্রফিটা উচু করে গগণপানে তাকিয়ে অন্তযার্মীকে বলবেন, আমিই সেরা।
ওই ট্রফির আলোকচ্ছটার মতো তার সাফল্যে ছড়িয়ে যাবে বিশ্বময়। ফুটবলের শুরু থেকে অন্তত পর্যন্ত। তার নামে লেখা হবে শ্রেষ্ঠত্বের বিজয়গাঁথা।
অবশেষে এতো হিসাবের চূড়ান্ত মীমাংসার সুযোগ নিয়ে এসেছে ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ২০০৬ আর ২০১০ বিশ্বকাপের ভাঙা স্বপ্ন জোড়া দিয়ে আলবিসেলেস্তেদের দলনেতা হয়ে প্রবিবেশী ব্রাজিলে আসেন মেসি।
তার পায়ে ভর করেই ২৪ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। এবার তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানি। দুই যুগ আগে যাদের কাছে রাজ্য হারিয়েছিল ম্যারাডোনা। এরপর যা আর উদ্ধার করতে পারেনি আকাশি-সাদারা।
আকাশি-সাদা জার্সি গায়েও মেসিকে খুঁজে পাওয়া যায়না বলে নিত্য দুয়ো দেওয়া হতো। অথচ ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ১০ গোল করে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সর্বাগ্রে দলকে বিশ্বকাপের টিকেট এনে দেন মেসি।
দেশের জার্সি গায়ে ৪২ গোল নিয়ে বাতিস্তুতার পর তিনিই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। অথচ তার সুযোগ ছিল স্পেনের হয়ে খেলার।
তারুণ্যে যখন তার প্রতিভার পূর্ণ স্ফূরণ শুরু হয় তখন ডাক পেয়েছিলেন স্পেন দলের হয়ে খেলার। তাহলে হয়তো আরো বছর চারেক আগেই মীমাংসা করতে পারতেন শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্কের। ছুয়ে দেখা হতো সোনালি ট্রফিও।
কিন্তু শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য ও যৌবন স্পেনের কাতালানে কাটিয়ে দিলেও বুকের অন্তঃস্থলে আকাশি-সাদা পতাকাকেই আগলে রেখেছিলেন মেসি। হয়ত বিধাতারও চাওয়া ছিল এমনই। ম্যারাডোনার পর মেসি নামক এ ভিনগ্রহের ফুটবলারের হাতেই তিনি ২৮ বছরের শাপ মোচন করাবেন আর্জেন্টিনার।
৬৪ বছর আগে যে মারাকানা কাঁদিয়েছিল ২ লক্ষাধিক ব্রাজিলিয়ানকে। সেই মারাকানায় ২০১৪ এর ১৩ এপ্রিল সোনালি ট্রফিতে চুমু একে আর্জেন্টিনাকে হাসাবেন মেসি। এমন স্বপ্ন এখন কোটি ভক্ত-সমর্থকদের।
রোববার জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেই মেসির একমাত্র অতৃপ্তি পূর্ণ হবে। সেইসাথে ঘুঁচে যাবে তার একমাত্র ব্যর্থতাও। এর মধ্য দিয়ে ২৮ বছর পর মেসির হাত ধরে ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনা পাবে তৃতীয় শিরোপা। সর্বকালের সেরা হওয়ার জন্য মেসির অপেক্ষা তাই মাত্র ৯০ মিনিটের।
মারাকানায় ৯০ মিনিট শেষে মেসি নুতন করে ইতিহাস লিখতে পারলে পরের শতাব্দী জুড়ে হয়তো তার সঙ্গেই চলবে অনাগতদের তুলনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৪