ঢাকা: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোহোমেডান স্পের্টিং ক্লাবের জন্ম ১৯৩৬ সালে। নামে, শৌর্যে এমনকি মাঠের পারফরমেন্সে অদম্য ১৫ বারের ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন ও ১২ বারের রানারআপ এই ক্লাবটি।
কেন মোহামেডানের মতো ক্লাবের এমন সংকটাপন্ন অবস্থা এবং সংকট উত্তরণে আপনারাই বা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? জানতে চাওয়া হয়েছিল মোহামেডানের পরিচালক সারোয়ার হোসেনের কাছে। উত্তরে তিনি জানান, ‘দেশের খেলার উন্নয়নে মাঠ এবং যেসব সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার ছিল এই মুহূর্তে তা দেশের কোনো ক্লাবেরই নেই। বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধাই অনুপস্থিত। তারপরেও আমরা আমাদের ফুটবলকে এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের ফেডারেশনগুলো ততটা স্বাবলম্বী না। এদেশের ফুটবলের উন্নয়নে বেশিরভাগ কাজই ক্লাবগুলোর করতে হয়। আমাদের খেলোয়াড় তৈরির কোনো সুতিকাগার নেই। ’
তবে সরোয়ার হোসেনের মতে ফুটবলের সার্বিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরিতে ক্লাবের নিজম্ব মাঠতো বটেই, আর্থিক সুবিধা ও একাডেমি থাকাও বাঞ্ছনীয়, ‘আমরা যদি পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা পাই এবং একাডেমি করতে পারি তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে তা যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ’
এদিকে বর্তমানে মতিঝিলের যে জায়গাটিতে ঢাকা মোহামেডান ক্লাব দাঁড়িয়ে আছে, তা খেলোয়াড় তৈরির জন্য একেবারেই অনুপযোগী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মোহামেডানের জন্য এখানে যে জমিটি দেয়া হয়েছিল সেটা একটা সম্পূর্ণই ব্যবসায়িক জায়গা। এখানে খেলোয়াড় তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব। ’
তবে, মোহামেডানের নিজস্ব মাঠ খরা ক্লাবটি খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করেন এই মোহামেডান পরিচালক, ‘২০০৭ সালে আমরা প্রতিতী গোল্ডকাপ নামে একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলাম। টুর্নামেন্টের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সেনা প্রধান। উক্ত অনুষ্ঠানে তার কাছে আমরা একটি জমির জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাভারে ২৫ একর জমির ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের নামে বরাদ্দ হলেও মন্ত্রণালয়ের জটিলতার কারণে আমরা জমিটি এখনও বুঝে পাইনি। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, আমরা গেল ৭ বছর যাবৎ জমির খাজনাসহ অন্যান্য সব কিছুই সময়মত পরিশোধ করে আসছি। ’
আর সাভারের এই জমিটি নিজেদের নামে বুঝে পেলে দেশের ক্রীড়ার সামগ্রীক উন্নয়নে মোহামেডান বড় অবদান রাখতে পারবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সাভারের এই ২৫ একরের জমিটির উপর আমাদের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মাঠ স্থাপনার পরিকল্পনা আছে। একটি ফুটবল, একটি ক্রিকেট আর অপরটি হবে হকি ও অ্যাথলেটিকসের জন্য। যদি আমরা সত্যিই এরকম সুবিধা তৈরি করতে পারি, তাহলে সেটা আমাদের ক্রীড়ার জন্য বড় একটি মাইলফলক হবে। ’
মোহামেডানের যদিও ছোট একটি মাঠ আছে, কিন্তু দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে প্রতিবছর অংশ নেয় এমন ১২টি ক্লাবের মধ্যে অনেক ক্লাবই আছে, যাদের নিজস্ব মাঠ নেই। বিষয়টি বাংলাদেশ ফুটবলের ফেডারেশনের বেঁধে দেয়া নিয়মকানুনের সঙ্গে কতটুকু সাংঘর্ষিক এবং এটা নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানটির কী দিক-নির্দেশনা আছে? জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের কাছে। জবাবে তিনি যা জানালেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবলের নিয়মানুযায়ী প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে অংশ নিতে হলে প্রতিটির ক্লাবেরই নিজস্ব মাঠ ও অনুশীলন ভেন্যু কোনটা সেটা বাফুফে’কে জানতে হয়। আমরাও ক্লাবগুলোকে তাদের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বলি। শুধুই মাঠই নয় দক্ষ কোচ, কোচিং স্টাফসহ জিমনেশিয়াম থাকলে সেটা খেলোয়াড়দের উন্নয়নে সুবিধা হয়। ’
‘কিন্তু এটা সত্য যে ঢাকার বেশিরভাগ ক্লাবেরই নিজস্ব মাঠ নেই এবং বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে তাদের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে। নিজেদের অনুশীলনের জন্য যে মাঠগুলো তারা ব্যবহার করে, তার বেশির ভাগই নিজেদের তত্ত্বাবধানে থাকেনা। তখন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রমনা পার্কে গিয়েও অনুশীলন করে। কিন্তু ৮-৯ বছর আগে বাংলাদেশ পেশাদার ফুটবল লিগ নামে যে টুর্নামেন্টটি আমরা শুরু করেছিলাম তার নিয়মকানুন আরও উন্নত ও কঠোর করছি। প্রতি মৌসুমেই আমরা বাড়তি কিছু নিয়মকানুনও যোগ করছি। বাফুফের পক্ষ থেকে তাদের যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দেওয়া হয়, তা ঠিকমতো কাজে লাগালে তা আমাদের ফুটবলকে একটি স্থায়ী উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে’ যোগ করেন সোহাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ২৫ এপ্রিল ২০১৬
এইচএল/এমআর