ময়মনসিংহ: নতুন কলেবরে শুরু হয়েছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। পেশাদার এ ফুটবলের লিগকে ঘিরে নগরজুড়ে স্বভাবতই উন্মাদনা তৈরির কথা ছিল।
এ ভেন্যু দর্শক পরিপূর্ণতা না পাওয়ায় খানিক বিলম্বে হলেও বোধোদয় ঘটেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিদের।
খোদ সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকিও এ ঘটনায় বেশ কয়েকবার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। ময়মনসিংহ পর্ব শেষ হবার মাত্র দিন চারেক আগে প্যানাফ্যাক্স আর ফেস্টুন নির্ভর প্রচারণা শুরু করেছে ক্রীড়া সংস্থা।
আবার তাদের এ প্রচারণায় ঢেকে দেয়া হয়েছে সংস্কৃতির নগরীর কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক বিভিন্ন ভাস্কর্য। ফলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার এমন কান্ডজ্ঞানে স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ক’দিন আগে ময়মনসিংহ পৌরসভা এসব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করলেও আবারো শৈল্পিকতার প্রতীক এসব ভাস্কর্যে থাবা বসিয়েছে জেলার ক্রীড়ার এ অভিভাবক সংস্থা। জানা যায়, উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম নগরী ময়মনসিংহকে নতুন ও নান্দনিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বিকশিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য মো: ইকরামুল হক টিটু। ব্রক্ষপুত্র নদের উপকণ্ঠের প্রাচীনতম এ নগরীকে কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিভিন্ন ম্যুরালে বা ভাস্কর্যের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু করেন।
নগরীর নতুন বাজার মোড়ে পায়রা চত্ত্বর, টাউন হল মোড়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার, পাটগুদাম র্যালির মোড়ের বিজয়’৭১, পৌরসভা সংলগ্ন প্রথম শহীদ মিনারের স্থলে আধুনিক ভাস্কর্য, ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে শহরের পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার শেকড় ও গাঙ্গিনার পাড় মোড়ের শাপলা স্কয়ার নির্মিত হয়। এসব ভাস্কর্যে আধুনিকায়ন সৌন্দর্যবর্ধনের দৃষ্টান্ত।
সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই গত ৪ আগস্ট জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিপিএল’র প্রচারণার অজুহাতে দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মরণে নির্মিত নজরুল ইসলাম স্কয়ার ও টাউন হল মোড়ের পায়রা চত্বরে বিপিএল’র বিভিন্ন বিলবোর্ড, প্যানাফ্যাক্স ও ফেস্টুন সাঁটিয়ে দেয়। এতে করে আড়াল হয়ে যায় এসব নান্দনিক ভাস্কর্য।
পরে ময়মনসিংহ পৌরসভা এসব প্রচারণার উপাদান সরিয়ে নিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চিঠি দেয়। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ এসব প্যানাফ্যাক্স-ফেস্টুন অপসারণ করে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় নগরে। নগরবাসী পৌরসভার এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানায়।
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যকে নতুন তাৎপর্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা নজরুল ইসলাম স্কয়ার ও নতুন বাজার মোড়ের পায়রা চত্বরে প্রচারণার থাবা বসায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাদের এমন কার্যক্রমকে নিয়েও গোটা নগরজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, নান্দনিক এসব স্থাপনার বদলে অন্যত্র এসব বিলবোর্ড, ফেস্টুন সাঁটাতে পারতো জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কিন্তু তারা মূলত নগরের সৌন্দর্যকে বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় ও দর্শনার্থীদের কাছে আড়াল করতেই এমন হীন প্রয়াস নিয়েছে।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার উদ্যোগে একবার এসব অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন করে তারা আবারো পুরনো কাজটিই করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকির সঙ্গে বাংলানিউজ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বহীন বলেই দাবি করেন। তার মতে, ‘বিপিএল’র প্রচারণার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। এতে করে ওই দু’ভাস্কর্যের কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না!’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, আগষ্ট ১৩, ২০১৬
এমআরপি