ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

ফুটবল

বাজে রেফারিংও রুখতে পারেনি শেখ রাসেলকে

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
বাজে রেফারিংও রুখতে পারেনি শেখ রাসেলকে ছবি: উজ্জল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৩ মিনিটেই নিশ্চিত গোলকে অফসাইড বানিয়ে দেওয়া ! ফাউল না দেওয়া। এমন কি লাল কার্ড দেখানোর মতো বিষয়ও এড়িয়ে যাওয়া। পুরো ম্যাচজুড়ে একের পর এক এমন বাজে রেফারিং এর শিকার হয়েও জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বিগ বাজেটের দল

চট্টগ্রাম: ১৩ মিনিটেই নিশ্চিত গোলকে অফসাইড বানিয়ে দেওয়া ! ফাউল না দেওয়া। এমন কি লাল কার্ড দেখানোর মতো বিষয়ও এড়িয়ে যাওয়া।

পুরো ম্যাচজুড়ে একের পর এক এমন বাজে রেফারিং এর শিকার হয়েও জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বিগ বাজেটের দল শেখ রাসেল। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ২-০ গোলে জয় তো উড়িয়ে দেওয়াই!

দুটি গোলই এসেছে ক্যামেরুনের ইকাঙ্গার দুটি বিশ্বমানের হেড থেকে। আর তাকে বাড়ানো দুটি ক্রসই ছিল অধিনায়ক আতিকুর রহমান মিশুর। এই জয়ের মধ্যে দিয়ে তিন পয়েন্টেই পকেটে পুরে নিল শেখ রাসেল। শুধু জয় নয় একটা মধুর প্রতিশোধও হয়ে গেল। এর আগে যে মুক্তিযোদ্ধার কাছে হেরেছিল শেখ রাসেল।

চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া এই ম্যাচের শুরু থেকেই শেখ রাসেলের একের পর এক সংঘবদ্ধ আক্রমনে দিশাহারা হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা। ম্যাচের ৪ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে শেখ রাসেলের সামনে।

মাঠের বা প্রান্ত থেকে মিড ফিল্ডার জামাল ভূঁইয়ার ডি বক্সের উদ্দেশ্যে ছোড়া ক্রস নাগালে পেয়ে যান আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ইকাঙ্গা। তিনি হেড নিলেও তা গোলবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
তবে এটি গোল না হলেও আক্রমণের ধার কমেনি।

ডি বক্সকে ঘিরে একের পর এক আক্রমণে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধার গোলকিপার মামুন খানকে। এর মধ্যেই ইকাঙ্গার বাড়ানো বল রুম্মানের পা ছুয়ে জড়িয়ে যায় জালে। তবে আশ্চার্যজনকভাবে রেফারি আনিসুর রহমান অফ সাইড দেখিয়ে তা বাতিল করে দেন।
 
অথচ খেলা দেখতে আসা দর্শকদের চোখে এটি ছিল পরিস্কার গোল। ৩২ মিনিটে ডি বক্সের ঠিক বাইরে সেবাস্তিয়ানকে ফাউল করলে ফ্রি কিকের নির্দেশ দেন রেফারি। সেবাস্তিয়ানের ফ্রি কিকটি একটুর জন্য জালে প্রবেশ করেনি। গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে। এরপর ৩৬ মিনিটের সেই শট। কর্নার পায় শেখ রাসেল।

আতিকুর রহমান মিশুর বাম পায়ের কর্নার কিক খুঁজে ইকাঙ্গার মাথা। দুর্দান্ত হেডে বল জড়িয়ে দেন দীর্ঘদেহী ইকাঙ্গা। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা গ্যালারি। এর মধ্যে দিয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় শেখ রাসেল।

এর আট মিনিট পর অর্থাৎ ম্যাচের প্রথমার্ধের ৪৪ মিনিটে লিড বাড়ানোর সুযোগ পায় শেখ রাসেল। মাঠের বাম প্রান্ত দিয়ে বল মুক্তিযোদ্ধার কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ভয়ংকর ইকাঙ্গা ঢুঁকে পড়েন ডি বক্সের ভেতরে। তারপর মাপা বল বাড়িয়ে দেন রণির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রণি।

এর দুই মিনিট পর নিশ্চিত আরও একটি গোল বঞ্চিত হয় শেখ রাসেল। মিশুর নেওয়া ফ্রি কিক সাবেস্তিয়ান পা ছুঁয়ে সাইড বারে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে। এর ফলে প্রথমার্ধেই দ্বিগুণ হলো না গোল সংখ্যা।

১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল পরিশোধ করতে আক্রমণ তৈরি করার চেষ্টা করে। তবে শুরু থেকেই তাদের আক্রমণ নস্যাৎ করে দেয় শেখ রাসেল।

এর মধ্যে ৬৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে শেখ রাসেলের অধিনায়ক মিশুকে ধাক্কা দিয়ে মাঠে ফেলে দেয় মুক্তিযোদ্ধার এক খেলোয়াড়। কিন্তু দেখেও না দেখার বান করে বিষয়টি এড়িয়ে যান রেফারি৭২ মিনিটে ফের বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয় শেখ রাসেল।

এবার মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক মামুন খান আঘাত করে ফেলে দেন ইকাঙ্গাকে। অনেকের মতে লাল কার্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেও বাজে রেফারিংয়ের কারণে বেঁচে যান তিনি।

রেফারি যে এই ঘটনায় ফাউল পর্যন্ত দেখাননি। তবে দুর্দান্ত ফুববল খেলেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায়  শেখ রাসেল। ম্যাচের ৮০ মিনিটে আবারও ইকাঙ্গা-মিশু জুটিতে গোল। এবারও মিশুর মাপা ক্রস দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে উঠে ইকাঙ্গা হেডের সাহয্যে পাঠিয়ে দেন গোলপোস্টে। মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক মামুন খানের দেখে দেখে গোল ‘উপভোগ‘ করা ছাড়া যেনো ছিল না কোনো উপায়!

বাকি ১০ মিনিটে একের পর এক সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালিয়ে গেলেও আর গোলের দেখা পায় নি শেখ রাসেল। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারেনি। ফলে ফলাফল থাকলো ওই-শেখ রাসেল-২, মুক্তিযোদ্ধা-০।
ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শেখ রাসেলের কোচ মো. শফিকুল ইসলাম মানিক উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেছেন নিজ দলের খেলোয়াড়দের। তবে বাজে রেফারিং নিয়েও কথা বললেন তিনি।

মো. শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ইকাঙ্গা অসুস্থ ছিল। এর মধ্যেও সে দুর্দান্ত খেলেছে। মিশু আর সেবেস্তিয়ানও অসাধারণ খেলেছে। আমাদের তিন পয়েন্ট খুব দরকার ছিল। তবে আমাদের আরও গোল হতে পারতো। রণি সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি। আশা করছি পরবর্তী ম্যাচগুলোতে সবাই আরও ভালো খেলবে।

জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিগে আরও ভালো পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন এই কোচ।

রেফারিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘১৩ মিনিটে আমাদের নিশ্চিত গোলটা কেনো অফসাইড দেখালো আমি বুঝতেছি না। ম্যাচ জেতায় কোনো অভিযোগে যাচ্ছি না। তবে পরবর্তীতে এমন বাজে রেফারিংয়ের শিকার হলে আমরা অভিযোগ জানাতে বাধ্য হবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।