কি হয়েছিল এই পাঁচ মিনিটে? এএফসি কাপের প্রথম পর্বের নিজেদের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর সঙ্গে মাঠে নামে আবাহনী লিমিটেড। কিন্তু তাতে কী?
তাতে অনেক কিছুই।
তাই ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণের পর আক্রমণ করতে থাকে আবাহনী। এই ম্যাচের প্রথম ৮০ মিনিট যেন ব্যাঙ্গালুরুকে নিয়ে খেলেছে আবাহনী। সব আক্রমণ ফিনিশিংয়ের অভাবে আটকে যাচ্ছিল। হঠাৎ ৮০ মিনিটে নিজের বিপদ ডেকে আনেন আবাহনীর নাসির চৌধুরী। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে দশ জনের দল হয়ে যায় অল ব্লুরা। এখান থেকে আর যাই হোক জয় নিয়ে ফেরাটা প্রায় অসম্ভব ছিল দ্রাগো মামিচের শীষ্যদের।
সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলো আবাহনী। ৮৭ মিনিটে রাইট উইং থেকে দলের একমাত্র স্ট্রাইকার এমেকার উদ্দেশে বাড়ানো জোনাথনের পাসটি রক্ষণভাগের মাথার উপর দিয়ে উড়ে এসে ফাঁকা জায়গায় পড়ার আগে বাম প্রান্ত থেকে উড়ে এসে স্লাইড করেন দলের নবীনতম খেলোয়াড় সাদ উদ্দীন। দেখতে দেখতে বল চলে যায় জালে। মুহূর্তের মধ্যে শ’দুয়েক দর্শকদের হুংকারে কেঁপে উঠে স্টেডিয়াম। এদিকে প্রেসবক্সে বসে থাকা সব সংবাদকর্মীর চোখ যেন ছানাবড়া। কী হলো এখানে? অবিশ্বাস্য গোলে এগিয়ে গেল আবাহনী।
তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর যখন ম্যাচ রেফারির বাঁশিতে ঝুলছে তখনই আরেকটি পাল্টা আক্রমণের চমক আবাহনীর। ব্যাঙ্গালুরুর গোলকিপার আর্মিন্দার মাঝ মাঠ পেরিয়ে যখন গোল করার চিন্তায় মত্ত তখন আবাহনীর ডিফেন্স থেকে হেড উড়ে আসে আর্মিন্দারের কাছে। গোলকিপারের পা থেকে বল ছুটে ডিফেন্স, ডিফেন্স থেকে আবার মাপা হেডে একেবারে রুবেলের পায়ে বল। ওত পেতে থাকা ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া যেন ভোঁ দৌড়।
দীর্ঘদেহের রক্ষণভাগকে ভেলকি দিয়ে ফাঁকা পোস্টে শুধু শট নেয়ার অপেক্ষা। কিন্তু দূরত্ব যে অনেক বেশি। প্রায় ৩৫ গজ থেকে সেই অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করলেন রুবেল মিয়া।
শূন্যে ভাসতে থাকা বলটি ধীরে ধীরে জালে জড়ানোর আগ মুহূর্তে গর্জনে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ফেঁটে পড়ে সবাই। আবাহনীও কাঙ্খিত জয়টি পেল। শেষ ৫ মিনিটের চমকে ওলট-পালট আর বিধ্বস্ত হলো ভারতের ব্যাঙ্গালুরু।
আবাহনীর দশজন দেখে রক্ষণভাগ উঠে আসার ফাঁকটাকেই যেন হারের কারণ বলছেন ব্যাঙ্গালুরের কোচ আলবার্তো রোকা, ওরা দশজন হওয়ার পর মনে হয়েছিল ম্যাচটি জিতে যাবো। জেতার জন্যই এসেছিলাম। সেই ফাঁকা জায়গাটিতেই গোল খেতে হলো। ভালো খেলেছে আবাহনী। মানসিক শক্তিটা ধরে রাখতে পেরেছে তারা। ’
আবাহনীর অভিভাবক দ্রাগো মামিচের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস, আমরা জয়ের জন্য নেমেছি। পুরো ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ করেছি। লাল কার্ড দেখার পরও বিশ্বাস ছিল জিতবো। ছেলেরা সেটা প্রমাণ করলো।
বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই আবাহনীকে জয়ের বন্দরে নেয়া নবাগত সাদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাসটা যেন আরও বেশি, ‘কোচ আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন ভালো কিছু করার। মাঠে মিডফিল্ডার হিসেবে নামানো হয়েছিল। পরে আমি অধিনায়ককে বলে উইংগে চলে যাই। তারপরে কাঙ্খিত গোলটি পাই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটাই আমার প্রথম গোল। খুবই রোমাঞ্চিত আমি। ’
উচ্ছ্বাসটা স্বাভাবিক। বহুবছর পর আবাহনী কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতলো। দেশের আধমরা ফুটবলকে যেন একটি রঙে রাঙিয়ে দিলো এই জয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ছাপিয়ে এই জয় রাঙিয়ে দিবে পুরো ফুটবল এমনটাই আশা সমর্থকদের।
এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকলেও চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার সুযোগ আছে আবাহনীর। এরপরের দুটি ম্যাচই জিতবে হবে মামিচের শীষ্যদের। ১৭ মে মালদ্বীপের মার্জিয়া ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ আছে অল ব্লুদের। এরপর ৩১ মে ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে হোম ম্যাচ আছে আবাহনীর।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
জেএইচ/আরএ