এরপর হঠাৎই আবার জ্বর বেড়ে যায়। এ সময়টাতে ঘাড়েও প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছিলেন সাবিনা।
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া কলসিন্দুর গ্রামের ‘ফুটবল কন্যা’ সাবিনা আক্তারের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ছিল এমনই। তার পরিবারের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম।
২০১৫ সালের এএফসি অণূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে জয়ী বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় সাবিনা আক্তার স্থানীয় কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সাবিনার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গারো পাহাড়ের পাদদেশের কলসিন্দুর গ্রাম। সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা, ভাই ও স্বজনরা। মৃত্যুর সংবাদে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাবিনার উপজেলার দক্ষিণ রাণীপুর গ্রামের বাড়িতে যান ওসি শওকত আলমও।
তিনি জানান, অণূর্ধ্ব-১৬ ক্যাম্প থেকে গত সপ্তাহে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন সাবিনা। এর ক’দিনের মাথায় সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। মাত্র চার বছর বয়সেই হারান বাবা সেলিম মিয়াকে। চরম আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেও মা সাবিনাসহ ৩ ভাই-বোনকে কোলে-পিঠে মানুষ করেন। ৩ ভাই-বোনের মধ্যে সাবিনার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবল কন্যাদের মাঝেও নিজেকে প্রমাণ করেন সাবিনা। ছিলেন স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল। বাংলাদেশ অণূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের চূড়ান্তপর্বেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এবারের অণূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই জ্বর কেড়ে নিলো এমন একটি কচি প্রাণ।
রাইট ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে নারী ফুটবলে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন সাবিনা। তার আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ ময়মনসিংহের তথা গোটা দেশের ক্রীড়াঙ্গন।
ময়মনসিংহ পন্ডিতপাড়া ক্লাবের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বাংলানিউজকে বলেন, কৃতি ফুটবলার সাবিনার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। দেশের নারী ফুটবলের জাগরণের সময়ে এ ফুটবল কন্যার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি।
এদিকে, ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম জানান, বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় সাবিনার গ্রামের বাড়ির পাশের একটি মাদ্রাসায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বাংলাদেশ অণূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার সাবিনা আক্তার নিজ গ্রামের বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এমএএএম/জেডএস