ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

'আরব বিদ্বেষী' ইসরায়েলি ক্লাবের মালিকানা কিনলেন আমিরাতের শেখ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
'আরব বিদ্বেষী' ইসরায়েলি ক্লাবের মালিকানা কিনলেন আমিরাতের শেখ বেইতর জেরুজালেমের জার্সি হাতে শেখ হামাদ (ডানে)/ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের শীর্ষ লিগের ফুটবল ক্লাব বেইতার জেরুজালেমের ৫০ শতাংশ মালিকানা কিনে নিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক শেখ। যদিও ক্লাবটি তীব্র 'আরব বিদ্বেষী' ও বর্ণবাদে কলঙ্কিত।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এমন খবর প্রকাশ করেছে।

ক্লাবটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী ১০ বছর ধরে আমিরাতের ধনকুবের হামাদ বিন খলিফা আল-নাহিয়ান ক্লাবের পেছনে ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবেন।

ইসরায়েলি ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এমন মহিমান্বিত একটি ক্লাবের অংশীদার হতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত। '

প্রায় তিন মাস আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম উপসাগরীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর বাহরাইনও একই পদক্ষেপ নেয়। দেশ দুটি ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্ততায় হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।

এর প্রায় ৩ মাস পর ইসরায়েলি ক্লাবের মালিকানা কিনে নিলেন আমিরাতের শেখ।

বেইতর জেরুজালেম ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব। এখন পর্যন্ত ক্লাবটি ইসরায়েল প্রিমিয়ার লিগের ৬টি শিরোপা জিতেছে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ মৌসুমে লিগ শিরোপা জেতা ক্লাবটির অন্যতম সমর্থক দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ক্লাবটির পরিচিতি অবশ্য শিরোপা জেতার জন্য নয়, বরং এর কট্টর ডানপন্থী সমর্থকরা। এই সমর্থক গোষ্ঠী নিজেদের 'লা ফ্যামিলিয়া' বলে পরিচয় দেয়। তাদের মূল টার্গেট আরবরা। অথচ ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ আরব।

বেইতর জেরুজালেমের মাঠ টেডি স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজিত হলে গ্যালারিতে এই সমর্থকরা নিয়মিতই 'আরবদের হত্যা করো' স্লোগান দেয়। এমনকি ক্লাবের মালিকপক্ষকে কোনো আরব কিংবা মুসলিম খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছে এই সমর্থকরা।

২০১৩ সালে দুই চেচেন মুসলিম খেলোয়াড়কে কেনার কারণে ক্লাবের অফিসে আগুনে লাগিয়ে দেয় সমর্থকরা। 'লা ফ্যামিলিয়া'র দুই সদস্যকে এজন্য অভিযুক্তও করা হয়।

২০১৮ সালে বেইতর জেরুজালেমের মালিকানা কেনার পর বর্তমান মালিক ইসরায়েলের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মোশে হোগেগ বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারণা চালান। গত ডিসেম্বরে তিনি বিসিবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি সমর্থকদের সাবধান করে দিয়েছি, তারা যদি একটা বর্ণবাদী মন্তব্য করে তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে মিলিয়ন ডলারের মামলা করব। '

অনেকের বিরোধীতা সত্ত্বেও হোগেগ গত সোমবার আবু ধাবির রাজ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যের কাছে ৫০ শতাংশ মালিকানা বেচে দেন। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে তিনি বিষয়টিকে 'নতুন এক অর্জন' বলে অভিহিত করেন। এরপর শেখ হামাদ বলেন, 'এমন ' মহিমান্বিত একটি ক্লাবের অংশীদার হতে পারায় আমি গর্বিত। ক্লাবটি সম্পর্কে আমি অনেক শুনেছি এবং এটা এমন বিখ্যাত শহরে, যা ইসরায়েলের রাজধানী এবং বিশ্বের অন্যতম পবিত্র শহরে অবস্থিত। '

শেখ হামাদের এই মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কারণ তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শহরের মালিকানা নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বহুদিন থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে ফিলিস্তিনিদের।

১৯৫৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। সম্প্রতি পুরো জেরুজালেম শহরকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। অবশ্য তাদের এই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়েছে শুধু ট্রাম্প প্রশাসন, গুয়েতেমালা এবং হন্ডুরাস।

পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ভাবে ফিলিস্তিনিরা। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পরও সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছিল, পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবেই মনে করে তারা। কিন্তু দেশটির প্রভাবশালী ধনকুবের শেখ হামাদ কিন্তু তা বলেননি। ফলে ইসরায়েলি ক্লাবের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরকে অনেকে ফিলিস্তিনের প্রতি প্রহসন বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।