ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সেবা-নিরাপত্তা দেওয়ার মধ্যেই তাদের সেহরি-ইফতার

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
সেবা-নিরাপত্তা দেওয়ার মধ্যেই তাদের সেহরি-ইফতার

ঢাকা: রোগীদের সেবা ও চিকিৎসা দেওয়াই চিকিৎসকদের ধর্ম। এ রমজানে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও রোজাদার চিকিৎসকরা ইফতারের সময়ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচারে রুমে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।

ইফতারের সময় হওয়ায় এক হাতে পানি অন্যদিকে রোজাদার চিকিৎসকের দৃষ্টি জরুরি রোগীদের দিকে। আগে চিকিৎসা তার পরে সবকিছু চিকিৎসকদের ধর্মই হচ্ছে রোগীদের সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া।

এছাড়া হাসপাতালের তিনটি ভবনে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যরা ডিউটিরত অবস্থায় তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে দিয়ে যাওয়া ইফতারেই ভরসা তাদের। পাশাপাশি হাসপাতালে দায়িত্বরত রোজাদার নার্স ও রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে কিনে আনা খাবারে ইফতার করেন।

শনিবার (২৫ মার্চ) ইফতারের সময় দেখা যায় জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার রুমে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন রোজাদার চিকিৎসকরা। লক্ষ্য করা যায় একদিকে মাগরিবের আজান, অন্যদিকে রোগী তবে রোগীদেরই প্রাধান্য দিতে দেখা যায় চিকিৎসকদের। হাতে থাকা পানি পান করে জরুরি রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় চিকিৎসক ও নার্সদের।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক (আরএস) ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, চিকিৎসকদের ধর্মই হচ্ছে রোগীদের সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া। জরুরি বিভাগে ৪ নম্বর রুমটি অস্ত্রোপচার কক্ষ। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ২৪ ঘণ্টায় এখানে জরুরি রোগীরা আসতে থাকে। এ ৪ নম্বর রুমে ৭ থেকে ৮ জন ডাক্তার সবসময় প্রস্তুত থাকে রোগীদের চিকিৎসার জন্য। কারণ এখানে সব সময় জরুরি রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। সেহরির সময় রোগী আসলে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন, ইফতারের সময় রোগীরা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন।  চিকিৎসকরা রোজাদার হলেও আগে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন কারণ রোগীদের সেবা ও চিকিৎসা দেওয়াই চিকিৎসকদের ধর্ম।

এদিকে হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) আব্দুর রউফ জানান, ১৪ জন নারীসহ হাসপাতালে মোট ৩৫০ জন আনসার সদস্য সিফটিংয়ের ভিত্তিতে তিনটি ভবনের বিভিন্ন স্থানে ডিউটি করে থাকে। এ রমজানে সব আনসার সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগে হাসপাতালের আউটডোরের উপরে আনসার ক্যাম্পে তাদের জন্য ইফতার তৈরি করা হয়। হাসপাতালে তিনটি ভবনে বিভিন্ন জায়গায় ৮০ থেকে ১০০ জন আনসার ইফতারের সময় ডিউটি করে থাকে। সেখানে তাদের জন্য ইফতার পৌঁছে দেওয়া হয়। হাসপাতালে রমজানের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও যার যার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় আনসার সদস্যদের ইফতার করতে দেখা যায়।

তবে এদিকে হাসপাতালের দায়িত্ব নার্স-স্টাফ ও পাশাপাশি রোগীদের স্বজনদের বেশির ভাগই হাসপাতালে বাইরে থেকে কিনে আনা ইফতারের ওপর তাদের ভরসা।  

টাঙ্গাইল ঘাটাইল উপজেলার বাসিন্দা রোগী রানা মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ধাপে ধাপে গত তিন মাস ধরে হাসপাতালে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি। ছেলের পাশে থাকেন সব সময় তার মা রহিমা বেগম। সুস্থ হওয়ার কারণে রানা ও তার মা উভয় রোজা রেখেছেন। বাইরে থেকে কিনে আনা ইফতারি তাদের ভরসা। প্রথম রোজার মতো দ্বিতীয় দিনও তারা বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনেন। হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজনরাও একই বক্তব্য দিয়ে জানান, হাসপাতালের বাইরে থেকে কিনে আনা ইফতারি তাদের ভরসা।

বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহাম্মদ কামাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রায় ২৯০০ নার্স সিফটিংয়ের ভিত্তিতে ডিউটিতে করে থাকেন। বিকেলে ডিউটিতে প্রায় ৭০০ নার্স তিনটি ভবনে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। ডিউটিরত অবস্থায় প্রায় সব নার্স  বাইরে থেকে কিনে আনা ইফতার তাদের ভরসা। নিজ উদ্যোগে তারা বাইরে থেকে ইফতার সংগ্রহ করে থাকে।

হাসপাতালে পরিচালক জেনারেল মো. নাজমুল হক  বলেন, হাসপাতাল হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার স্থান। অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করে তোলাই দায়িত্ব। এ দায়িত্ব চিকিৎসকদের পাশাপাশি সবাই সঠিকভাবে পালন করে। রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দেওয়ার মধ্যেই নিজ উদ্যোগে দায়িত্বরতরা সেহরি ও ইফতার করে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এজেডএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।