ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ক্যানসার নিরাময়ে করসলের কার্যকারিতা নিয়ে যা বললেন গাজী আলী আশরাফ 

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
ক্যানসার নিরাময়ে করসলের কার্যকারিতা নিয়ে যা বললেন গাজী আলী আশরাফ  করসল হাতে গাজী আলী আশরাফ

সাতক্ষীরা: করসল। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফলটি স্থান বিশেষে টক আতা, লক্ষ্মণ ফল, সায়ারসপ, গ্রাভিওলা বা গায়াবানো নামেও পরিচিত।

কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও করসল বা টক আতা গাছের ফল ও পাতা ক্যানসার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী বা ক্যানসারের বিকল্প চিকিৎসা বলে প্রচার রয়েছে।  

করসল ফলের গা ঘন সবুজ এবং কাঁটাযুক্ত। ডিম্বাকৃতির এই ফল ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এগুলির মাংস রসালো, অ্যাসিডিক, সাদাটে এবং সুগন্ধযুক্ত। ফলটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ রয়েছে।  

এই করসল বা টক আতা গাছ নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের গাজী আলী আশরাফ।  

২০১২ সালে থাইল্যান্ড থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে ৭টি চারা তৈরি করেছিলেন গাজী আলী আশরাফ। এর মধ্যে ৬টি ফলবান করসল গাছ এখনো বেঁচে আছে। নিজের লাগানো করসল বা টক আতা গাছ থেকে দীর্ঘ সাত বছর পর প্রথমবার ফল পান তিনি। যার একটির ওজন হয়েছিল এক কেজি ২৭ গ্রাম। গায়ে কাঁটাযুক্ত করসল ফলের ভেতরটা অনেকটা আতার মতোই। স্বাদও অনন্য।  

ক্যানসার প্রতিরোধে করসলের ফল ও পাতা বেশ উপকারী বলে দাবি করেছেন গাজী আলী আশরাফ।  

তিনি জানান, ২০২০ সালে তার ক্যানসার ধরা পড়ে। বয়স বিবেচনায় তাকে কেমোথেরাপি দিতে চাননি চিকিৎসকরা। ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের উপেক্ষা করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেন আর ক্যানসারের চিকিৎসা নেবেন না। পরে বিকল্প হিসেবে নিয়ম করে করসল পাতার রস খাওয়া শুরু করেন।  

গাজী আলী আশরাফ বলেন, করসল ফল তো আমাদের দেশে দুষ্প্রাপ্য। তাই করসলের পাতার রস খেতে শুরু করি। প্রতিদিন তিন বেলা করসল পাতা পানি দিয়ে জ্বালিয়ে চায়ের মতো করে খেতাম। তিন বেলা খেলে সহ্য হতো না। এর পর কমিয়ে দুই বেলা, তারপর আস্তে আস্তে আরও কমিয়ে দেই। একপর্যায়ে সুস্থ হয়ে উঠি এবং এখনো আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। এখন মাঝে মধ্যে খাই। শুধু আমি নই, আমার কাছ থেকে সাতজন ক্যানসার রোগী এই পাতা নিয়ে যায়। তারাও উপকার পাচ্ছেন, ভালো আছেন। করসলের ফল ও পাতা খুবই উপকারী। তবে তা অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।  

গাজী আলী আশরাফ নিজেই করসলের পাতা ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন দাবি করে বলেন, আমার কিডনিতে টিউমার হলো। পরে অপারেশন করে টিউমারসহ একটি কিডনি ফেলে দেওয়া হলো। টিউমারটি পরীক্ষা করে দেখা গেল ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। তখন আমার ৭৪ বছর বয়স। চিকিৎসকরা আমার বয়স বিবেচনায় কেমোর বিকল্প হিসেবে রেডিয়েশন ট্যাবলেট খাওয়াতে শুরু করলো। এক মাস খাওয়ার পর দেখা গেল আমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। তখন আমি ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে করসলের পাতার রস খাওয়া শুরু করি। আমি এখন একটি কিডনি নিয়ে জীবনযাপন করলেও বেশ সুস্থ আছি।  

তিনি আরও বলেন, করসল নিয়ে বড় আকারের গবেষণা হওয়া দরকার এবং এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা সবার মাঝে তুলে ধরা দরকার।  

একই সঙ্গে করসল বা টক আতা গাছ বেশি করে লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

গাজী আলী আশরাফের দাবির সঙ্গে বিশ্ব মুক্ত কোষ উইকিপিডিয়া প্রদত্ত তথ্যের যেমন কিছুটা সামঞ্জস্যতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও তুলে ধরা হয়েছে।  

উইকিপিডিয়া বলছে, করসল বা টক আতার বীজ ও পাতাকে নিউরোটক্সিন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। যা ক্ষতিকর।  

আবার, একথাও বলা হচ্ছে যে, মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যানসার সেন্টার ক্যানসার চিকিৎসায় লক্ষ্মণ ফলের অবদান আছে দাবি করে তালিকাভুক্ত করেছে। একই সঙ্গে ক্যানসারের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে লক্ষ্মণ ফল ব্যবহারের বেশ প্রচারও রয়েছে।  

যদিও ক্যানসার গবেষণা ইউকে এ সম্পর্কে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে- সামগ্রিকভাবে, গ্রাভিওলা ক্যানসারের নিরাময়ের জন্য কাজ করে এমন কোনো প্রমাণ নেই। পরীক্ষাগার গবেষণায় গ্র্যাভিওলা সূত্রগুলি কিছু ধরনের লিভার এবং স্তন ক্যানসারের কোষকে মেরে ফেলতে পারে যা নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী। তবে এর চেয়ে বড় কোনো চিহ্ন এখনও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বড় কোনো স্টাডি নেই। তাই আমরা এখনও জানি না এটি ক্যানসারের চিকিৎসা হিসেবে কাজ করতে পারে কি না।  

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার কামালনগরের সায়েম ফেরদৌস মিতুল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যিনি একজন ক্যানসার রোগী এবং কেমোথেরাপি নিয়েছেন। একই সঙ্গে করসলের পাতার রসও খাচ্ছেন।  

তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একবার করসল ফল খেয়েছি। এর পাতার রস এখনো সপ্তাহে একবার খাই। করসলের পাতার রস অত্যন্ত এন্টি অক্সিডেন্টাল। এটি যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তেমনি টানা দুই-তিনদিন খেলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমনটি হয় কেমো দিলে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩ 
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।