নীলফামারী থেকে: রোগীদের কাছে টিকিট বিক্রি ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ধলাগাছ এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি।
প্রতিদিনের টিকিট বিক্রি এবং হাসপাতালটির নিজস্ব একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে মাসে যে টাকা আয় হয়, সে টাকা দিয়ে চলছে হাসপাতালের যাবতীয় খরচ।
২০১২ সালে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মোয়াজ্জেম হোসেন দুর্নীতির অভিযোগে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই এ করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এ হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পর ঢাকার সাভারে আরো একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল স্থাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
তিনি চলে যাওয়ার পর হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিই বর্তমানে হাসপাতালটি পরিচালনা করছে।
১৯৯৫ সালের দিকে ফাইলেরিয়া বিশেষজ্ঞ ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের উদ্যোগে গঠিত ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি অব বাংলাদেশ (আইএসিআইবি) নামের একটি সংস্থা কাজ শুরু করে। ওই সংস্থার মাধ্যমে জাপান সরকারের অর্থায়নে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২০০২ সালে ২৫ শয্যার একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল চালু করা হয়, যা বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত।
![Philaria_1 Philaria_1](files/Philaria_1_675720448.jpg)
হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সুরত আলী বাবু বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালটি যখন চালু হয় তখন এখানে স্টাফ ছিলেন ২৬ জন। এর মধ্যে সরকারি স্টাফ ছিলেন আট জন। ২০১২ সালে ডা. মোয়াজ্জেম চলে যাওয়ার পর তারাও ডেপুটেশন বাতিল করে হাসপাতাল ছেড়ে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে ১৭ জন স্টাফ দিয়ে। এর মধ্যে ডাক্তার দুইজন, তত্ত্বাবধায়ক একজন, নার্স ৩ জন, কো-অর্ডিনেটর একজন, ল্যাব টেকনিশিয়ান একজন, এমএলএসএস তিনজন, গার্ড দুইজন, ক্লিনার দুইজন, সুইপার একজন এবং অ্যাম্বুলেন্সচালক একজন। বর্তমানে একজন গাইনি ডাক্তারের জরুরি প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
সুরত আলী বাবু জানান, এখনো হাসপাতালের প্রত্যাক স্টাফের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। যা অর্থের অভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, আয়ের চেয়ে হাসপাতালের ব্যয় অনেক বেশি।
তিনি জানান, হাসপাতালটিতে বিনামূল্যে ফাইলেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ হাজার রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে দেড়শ’ রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য সরঞ্জাম না থাকায় প্রায় সময়ই সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানালেন তিনি।
![Philaria_2 Philaria_2](files/Philaria_2_459259829.jpg)
ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সায়েদুল ইসলাম জানান, ১৯৭৭ সালে তিনি ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন রংপুরে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা ভালো হন। কিন্তু পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই বছর ধরে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন ফাইলেরিয়া হাসপাতালে। এখন তিনি সুস্থ।
তিনি জানান, এখানে খরচ শুধুমাত্র ৪০ টাকা, যা টিকিটের মূল্য। সরকারিভাবে একটি ওষুধ ফ্রি দেওয়া হয় আর বাইরে থেকে দুইটা ওষুধ কিনতে হয়। ওইসব ওষুধের দামও অনেক কম।
তত্ত্বাবধায়ক সুরত আলী বাবু জানান, সরকারিভাবে ডাইইথাইলকার্বামাজিন নামে একটি ট্যাবলেট দেওয়া হয় রোগীদের। এছাড়া সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিম হাসপাতাল পরিদর্শন করে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, বেসরকারিভাবেও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব, এমনকি ফাইলেরিয়ামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএফএম তৈয়ব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, অর্থের অভাবে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মাঝে মধ্যেই মনে হয় চাকরি ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু আমি ছাড়া যেহেতু ফাইলেরিয়া রোগের অন্য কোনো ডাক্তার নেই, তাই বিবেক আমাকে এখানে আটকে রেখেছে।
বিকলাঙ্গতা থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে তিনি সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।
** বিকলাঙ্গতা দূর করা সম্ভব : ডা. তৈয়ব
** ফাইলেরিয়ায় বিকলাঙ্গ হতে বসেছেন উত্তরের মানুষ
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪