বরিশাল: বিদ্যুৎ গেলেই অনেকটা রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসে বরিশালের মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে। তখন মোমবাতি বা টর্চলাইট দিয়ে রোগী দেখা ও সেবার কাজগুলো সারতে হয় সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়াও সমস্যার অন্ত নেই হাসপাতালটিতে। চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট, অকেজো মেশিন, পরিচালনায় অব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।
মুলাদী ও আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও বর্তমানে নিজেই রোগী হয়ে উঠেছে হাসপাতালটি।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতালটি ঘুরে, রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, হাসপাতালটির চরম বেহাল অবস্থার কথা।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনের অবস্থা শোচনীয়। সেখানে রাতে নয়, দিনের বেলাতেই বিদ্যুৎ না থাকলে পুরো অন্ধকার নেমে আসে। তখন রোগী দেখা, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে হয় মোমবাতি বা টর্চলাইন জ্বালিয়ে। এমনকি, ছোট-খাটো ড্রেসিং ও সেলাইয়ের কাজও করতে হয় এভাবে।
তারপরেও মুলাদী উপজেলার ও মেহেন্দীগঞ্জের কাজিরহাট থানাধীন বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রতিদিন নানা সমস্যায় ছুটে আসছে এখানে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালটিতে জরুরি ও প্রাথমিক সেবা ছাড়া তেমন কোনো সেবা ও অস্ত্রোপচার করা হয় না। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ডেলিভারি ছাড়া সিজার অপারেশন হয় না।
এখানে নেই তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও। ৫০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে আন্তঃবিভাগে ৩১ শয্যা চালু রয়েছে। বাকি ১৯ শয্যা চালু হবে নির্মাণাধীন ৩ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ সম্পন্নের পর।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চালু থাকা ৩১ শয্যার অনুকূলে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও শিশু বিভাগের প্রায় ৪০ জন রোগী প্রতিদিন ভর্তি থাকছে। পাশাপাশি বহিঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছেন। তবে রোগীরা সরকারি কিছু ওষুধ পেলেও তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগসহ চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন মিলিয়ে পুরাতন সাতটি ভবন রয়েছে। এর সবগুলোকেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে প্রকৌশল বিভাগ। এছাড়া নতুন নির্মাণাধীন তিনটি ভবনের মধ্যে একটি হাসপাতালের, আর দুইটি কোয়ার্টারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
এদিকে, চারমাস পূর্বে নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যোগদান করলেও তিনিও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি করতে পারেননি।
এর সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। মোট ২৮ চিকিৎসকের স্থলে আছেন আটজন। এদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ডেপুটেশনে রয়েছেন দুইজন। তাই বাধ্য হয়ে ছয়জন দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।
তিনি বলেন, এখানে অল্প কিছু রি-এজেন্ট থাকায় প্রসাব-পায়খানা ও রক্তের হাতেগোনা কয়েকটি টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও জায়গা ও টেকনিশিয়ানের অভাবে সেটি চালু করা যাচ্ছে না। একই কারণে আলট্রাসনো মেশিন আনা হচ্ছে না।
তিনি জানান, মাসখানেক আগে অ্যাম্বুলেন্সের চালক মারা যাওয়ায় গাড়িটি সেভাবেই পড়ে আছে।
এদিকে, কমপ্লেক্সের পানির পাইপ, বৈদ্যুতিক খুঁটি পুরাতন হয়ে গেছে। ফলে পানির পাইপ লিক করছে ও বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ে তার নষ্ট হয়ে গেছে। পুরাতন ভবন অনেকটাই অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অনেক জায়গায় ছাদের ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফলে চিকিৎসকরা সামিয়ানা টানিয়ে রেখেছেন।
তবে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চললেও তা চলছে কচ্ছপ গতিতে। ফলে কবে হাসপাতালটি নিজেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
এসআর/জেডএম