বরিশাল: প্রচণ্ড গরম আর এসি নষ্ট থাকায় বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের রোগীদের কষ্টের যেন শেষ নেই।
গরম আর আগুনে পোড়ার জ্বালা নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই রোগীদের থাকতে হচ্ছে এ ওয়ার্ডটিতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ ওয়ার্ডটিতে একটি অপারেশন থিয়েটার, একটি ড্রেসিং রুম, একটি করে চিকিৎসক এবং নার্সদের কক্ষ রয়েছে।
এছাড়াও এ ওয়ার্ডটিতে রয়েছে ৩০টি বেড। যেখানে পুরুষ ও নারী রোগীরা ভাগাভাগি করে থাকেন। এ বেডের অনুকূলে ওয়ার্ডটিতে ১২টি ফ্যান ও চারটি এসি রয়েছে।
কিন্তু এক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চারটি এসির মধ্যে দু’টি বিকল হয়ে গেছে গরমের শুরু থেকেই। আর বাকি দু’টি ঠাণ্ডা না হওয়ায় চালানো হয় না। এগুলো মেরামতের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফলে প্রচণ্ড গরমে কক্ষের তাপমাত্রা সব সময়ই অনেক বেশি থাকে।
সম্প্রতি এ ওয়ার্ডটি ঘুরে দেখা গেছে, স্বজনরা টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যান এনে রোগীদের শরীরে বাতাস করছেন।
রোগীর স্বজনেরা জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে এমনিতেই অনেক জ্বালা পোড়া করে। তার ওপর বর্তমানে যে গরম পড়ছে, তাতে এ জ্বালা-পোড়া আরো বেড়ে যায়। সেজন্য নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছেন। এতেও যদি কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়।
এদিকে, জনবলের অভাবে ওয়ার্ডটির বেসিন ও টয়লেট অপরিষ্কার থাকলেও দেখার কেউ নেই। পরিষ্কারের জন্য একজন আয়া থাকলেও রোগীর স্বজনদের ভীড়ে হিমশিম খাচ্ছেন ওয়ার্ডটি পরিষ্কার রাখতে। আবার পাঁচজন ব্রাদার এবং নার্স থাকলেও নেই কোনো ওয়ার্ড বয়।
চিকিৎসকরা জানান, বার্ন ইউনিট একটি সংবেদনশীল ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের রোগীদের জন্য তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম এবং ওয়ার্ডটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজন হয়। এসব সমস্যার কারণে রোগীর আরোগ্য লাভে সময় বেশি লাগে এবং নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওয়ার্ডের ইনচার্জ ব্রাদার মোস্তফা কামাল রাজু বাংলানিউজকে জানান, তাদের এ ওয়ার্ডটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ জন রোগী থাকেন। শনিবার ও বুধবার গড়ে ছয়/সাতটি অপারেশন করা হয়। তবে কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি রোগীর অপারেশন হয়ে থাকে।
পোড়া রোগীর জন্য কক্ষের তাপমাত্রা যে অবস্থায় থাকা উচিত, ওয়ার্ডটির এসি নষ্ট থাকায় তা সম্ভব হয় না। প্রকৌশলীদের মতে, ওয়ার্ডটির তাপমাত্রা রোগীর জন্য সহনশীল করতে ১২ টনের এসির প্রয়োজন। কিন্তু শুরু থেকে এ কক্ষে এক টন করে চারটি এসি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে দু‘টি এসি নষ্ট রয়েছে। আর বাকি দু’টি এসির মাধ্যমে রুম ঠাণ্ডা না হওয়ায় তা চালানো হয় না।
তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
কক্ষটির দক্ষিণ পাশের জানালা খুলে দিলে রুম কিছুটা ঠাণ্ডা হয়। তবে সেদিকে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধ আসে এবং মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যায়। এ কারণে জানালা খোলাও সম্ভব হয় না।
ওয়ার্ডের ইনচার্জ আরো জানান, রোগীর স্বজনেরা বেসিন, টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে অল্পতে নষ্ট করে ফেলেন। আবার রোগীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া জিনিসপত্রও স্বজনেরা নষ্ট করে ফেলেন। এক্ষেত্রে রোগীর কথা কেউ চিন্তা করেন না। তাই রোগীর স্বজনদের সচেতন হওয়াটা জরুরি বলে মনে করেন ওয়ার্ডের ব্রাদার ও নার্সরা।
সহকারী রেজিস্ট্রার মিল্টন মল্লিক জানান, বার্ন ইউনিটের রোগীর শারীরিক যে অবস্থা থাকে, তাতে কম তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ওয়ার্ডটিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাও চালানো হয়। তবে এ ওয়ার্ডের এসি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে এখনো কেউ তাকে কিছু জানাননি বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল হক জানিয়েছেন, যে এসিগুলো আছে তা মেরামত করলে কোনো কাজ হবে না, সেগুলো পাল্টাতে হবে। পাশাপাশি চার টন নয়, এ কক্ষের জন্য ১২ টনের এসির প্রয়োজন। এ সমস্যার সমাধান যতো দ্রুত সম্ভব করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
আরএ/এএসআর