হাসপাতাল ঘুরে: ১২ ফুট পুরু ছাদ। দু’পাশের দেওয়ালও তাই।
এই ইউনিট নির্মাণ সম্পন্ন হলে অন্য এক মাত্রায় পৌছে যাবে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের আরো কয়েকটি হাসপাতালে এমন ক্যান্সার ইউনিট আছে বটে, কিন্তু এই হাসপাতাল তাদের সব ক’টিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত ক্যানসার সেন্টার সুইজারল্যান্ডের বেলাঞ্জনা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই দুই বাংকার গড়ছেন এনাম মেডিকেলের স্বপ্নদ্রষ্টা স্থানীয় এমপি এনামুর রহমান। এতে খরচ হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। সম্প্রতি ১১০ কোটি টাকার মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এনে নিজের হাসপাতালকে নতুন করে সাজিয়েছেন তিনি। রেডিও থেরাপি বিভাগের পাশেই অক্সিজেন তৈরির কক্ষ। এখান থেকেই হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। ব্লাড ব্যাংকের অবস্থান নিচতলাতেই।
ওপরে ২১০ ফুট দীর্ঘ ও ৬৫ ফুট প্রস্থের প্রতিটি ফ্লোরে ৮টি করে ওয়ার্ড, ২০টি করে কেবিন। বেসরকারি হলেও এই হাসপাতালে রোগির ভিড় সরকারি হাসপাতালের মতো। উপরন্তু আর সব হাসপাতালের বহি:বিভাগ কেবল দিনের প্রথম অর্ধে খোলা থাকলেও এনাম মেডিকেলের বহি:বিভাগ খোলা থাকে দিনের উভয় ভাগেই। আর দিনের দ্বিতীয় ভাগে রোগির গিজগিজে ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না এখানকার বহি:বিভাগে। উপরে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে পরিচর্যা চলছে অন্তত ৭ জন রোগীর। বিভিন্ন ল্যাবে উঁকি দিয়ে দেখা গেলো-অপারেশন চলছে। নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যত্ন চলছে শিশুদের। এই ইউনিট ঠেকিয়ে দিচ্ছে শিশুদের অকাল মৃত্যু। সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীরা যথেষ্ট আন্তরিক। বড়দের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও যত্নের ছাপ। ব্যস্ত নিউরো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, এনডোসকপি বিভাগ। প্রতি রোগির জন্য সদা প্রস্তুত ৬/৭ জন করে সেবাকর্মী। মোট ২২টি ওপারেশন থিয়েটার আছে এনাম মেডিকেলে-যেগুলো কখনোই খালি থাকে না। এগুলোর মেঝেতে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী অ্যাপোক্সি পেইন্ট। আছে প্যাথলজিসহ বিভিন্ন বিভাগের পৃথক ল্যাব, আইসিইউ। মানবদেহের বিভিন্ন উপরকণ নিয়ে গোটা পাঁচেক বিভাগ ভিত্তিক জাদুঘরও আছে হাসপাতার কমপ্লেক্সে। এই হাসপাতালের মতো নিউরোসার্জারি ও মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব কমই আছে দেশে।
এই হাসপাতাল কখনো বিদ্যুৎহীন থাকে না। সরকারি বিদ্যুৎ চলে গেলে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায় জেনারেটর। সম্প্রতি হাসপাতাল কমপ্লেক্সে বিশাল এক মসজিদও গড়া হয়েছে। এসব সুবিধার কারণে দিনদিনই জনপ্রিয় থেকে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এনাম হাসপাতাল। এরই মধ্যে এই হাসপাতালের আসন সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের আর কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এতো আসন কল্পনাও করা যায় না। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে আসন সংখ্যার বিচারে এর চেয়ে কেবল এগিয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ঢাকার উপকণ্ঠে শিক্ষা, বাণিজ্য ও শিল্প নগরী সাভারে ২০০৩ সালে গড়ে ওঠা এই হাসপাতাল এরই মধ্যে হয়ে উঠেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা-ভরসা-আশ্রয়ের গন্তব্য। এই হাসপাতালের বেড, কেবিনের ভাড়া আর সব বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক। চিকিৎসার ব্যয়ও নাগালের মধ্যে। যদি কেউ ওই টাকাও কুলিয়ে উঠতে না পারেন, তবুও চিকিৎসা ঠেকবে না এনাম হাসপাতালে। নিজের অফিসে, কনফারেন্স রুমে, করিডোরে যখন তখন সামনে এসে দাঁড়ায় রোগীর স্বজন। তাদেরকে কখনোই হতাশ করেন না এনামুর রহমান। বাড়িয়ে ধরা বিলে কলমের খোঁচায় কমিয়ে দেন বিলেন টাকা। করিডোরে এমন কয়েকটি বিলের কাগজে সই করার ফাঁকে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা বাণিজ্যিকভাবে দেখি না। আগে সেবা, পরে অন্য কিছু। তাই এই হাসপাতালের গুরুত্ব প্রতিদিনই বাড়ছে।
আমাদের মেডিকেল কলেজে শিক্ষক আছেন প্রায় ৩শ’ জন। শিক্ষার্থীর চাপে প্রতি বছরই আসন সংখ্যা বাড়াতে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এনাম মেডিকেল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল মান্নান শিকদার বলেন, বাংলাদেশে কমপ্লিট হাসপাতাল কম। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এখানকার মতো টিচিং স্টাফ অনেক সরকারি হাসপাতালেও নেই। তাই আমাদের ছাত্রের কখনো অভাব হয় না।
বর্তমান প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক একেএম মুজিবুর রহমান বলেন, এখানকার ছাত্ররা ভালো করছে। মেডিকেলে উচ্চশিক্ষায় জায়গা করে নিচ্ছে। পিএসসিতে এনাম মেডিকেল কলেজের কথা বললে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। কার্যত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে হতাহতদের নিরন্তর সেবা দিয়ে সারাবিশ্বের নজরে আসে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সেই জাতীয় দুর্যোগে রাত-দিনের হিসাব ভুলে টানা সেবা দিয়ে যান এখানকার চিকিৎসক-ছাত্র-শিক্ষকরা। ওই ঘটনার পর ছাত্র ও অভিভাবকদের আগ্রহ বেড়ে যায় এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতি। সঙ্গে এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. এনামুর রহমানের সহজাত সেবার মানসিকতা আর আন্তরিকতা হাসপাতালটির ধারাবাহিক উন্নতির পথ রচনা করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৬
জেডএম/