ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যখাত ডিজিটালকরণে কাজ করবে ‘টনিক’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
স্বাস্থ্যখাত ডিজিটালকরণে কাজ করবে ‘টনিক’

ঢাকা: এশিয়ায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এসেছে অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠান টনিক। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিনর এ মোবাইল স্বাস্থ্যসেবার উদ্বোধন করেছে।

টেলিনরের মালিকানাধীন ৫৭ মিলিয়নের (৫ কোটি ৭০ লাখ) অধিক গ্রাহক নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে টনিক। প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত বর্ধিত আরও অন্যান্য সেবা পাওয়া যাবে টনিকে।
 
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ। অথচ এদেশে ১ হাজার মানুষের জন্য গড়ে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র দশমিক ৪ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্যবিমা নেই।
 
এ তথ্যের মাধ্যমেই বোঝা যায় এখানে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। টনিকের লক্ষ্য, মোবাইলের ব্যবহারকে পুঁজিরূপে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন দ্বার উন্মোচন করে দেশের ১২ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে এ সেবা ছড়িয়ে দেওয়া।
 
এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে টেলিনর হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিদ রহমান জানান, স্বাস্থ্যখাতকে ডিজিটালকরণের মাধ্যমে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। টনিক এ ক্ষেত্রেই কাজ করবে। যেখানে প্রায় সব মানুষের হাতেই মোবাইল ফোন রয়েছে, সেখানে সমস্যা সমাধানে মোবাইল ফোনকে খুব শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটা কোটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
 
টেলিনরের মালিকানাধীন টনিক একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে টনিক চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে কাজ করবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘টনিক জীবন’। গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পোর্টাল এটি। এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ দেবেন। গুগল সার্চ যেমন ভারত, ব্রাজিল ও অন্যান্য দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যসেবা দিচ্ছে, এটি অনেকটা সেরকমই।  

এছাড়াও রয়েছে ২৪/৭ হেলপলাইন, যেখানে কাজ করবে ৩০ জন ডাক্তার। এ হেলপলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকরা ডাক্তারের কাছ থেকে দূরে থাকলে কিংবা এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় না থাকলেও প্রয়োজনে চিকিৎসা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাবেন।
 
গ্রামীণফোনের যেকোনো গ্রাহক ইউএসএসডি *৭৮৯# নম্বরে ডায়াল করে অথবা www.mytonic.com ওয়েবসাইটে গিয়ে কিংবা ৭৮৯ নম্বরে কল করার মাধ্যমে বিনা খরচে টনিকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
 
ভারতের প্রাকটো ও লাইব্রেটের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা এ ধরনের সেবার বাইরেও রোগীর অতিরিক্ত যত্নে বাড়তি সব সুবিধা দিচ্ছে, টনিকও দিচ্ছে তেমন সব সুবিধা। প্রথমত, টনিকের মাধ্যমে গ্রাহকরা বছরে নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ের ওপর  সর্বোচ্চ চারবার পর্যন্ত আর্থিক পরিসেবা পাবেন।
 
সাজিদ রহমান বলেন, উদাহরণস্বরূপ, টনিক ব্যবহারকারীদের জন্য তিন রাত হাসপাতালে থাকার ফি ৫০০ টাকা হতে পারে। এ অর্থের পরিমাণ খুব বেশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ মানুষেরই স্বাস্থ্যবিমা করা নেই। অথচ এখানে একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন প্রতি মাসে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়াও টনিকের ডিসকাউন্ট সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা খরচের ওপর ডিসকাউন্ট পাবেন। প্রাথমিকভাবে ৫০টি হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে।

তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
 
প্রাথমিকভাবে গ্রামীণফোন গ্রাহকরা বিনামূল্যে টনিক সুবিধা পাবেন। এটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। সাজিদ রহমান ব্যাখ্যা করে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেবা গ্রহণ অনুসারে এটি পরিশোধযোগ্য সেবা মডেল হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, এখানে প্রাথমিক সেবা বরাবরই বিনামূল্যে থাকবে, কিন্তু বিস্তৃত সেবা পরিশোধযোগ্য হবে। এটি এখন যে অবস্থায় আছে, সেটির পরিবর্তন ঘটবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত নতুন সব ফিচার এ সেবার সঙ্গে যুক্ত না হয়।
 
টনিকের আন্তর্জাতিক বিস্তৃতি সময়ের ব্যাপার হলেও টেলিনর হেলথের সিইও বর্তমানে এটি নিয়ে তেমন কিছু ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানোর ব্যাপারে ইচ্ছে আছে আমাদের। কিন্তু এটি নিয়ে এখনও তেমন করে ভাবিনি’।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম ৫/৬ মাস বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কাজ করে যাবো’।
 
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনরের (নরওয়ে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেলিনরের দাবি অনুসারে ১৩টি দেশে তাদের ২০.৮ কোটি গ্রাহক রয়েছে) মালিকানাধীন টনিক অনেকটা এম-হেলথ স্টার্টআপের মতো করে শুরু করেছে।
 
সাজিদ রহমান বলেন, ‘আমরা স্টার্টআপের মতো করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু আমরা যে বৈশ্বিক একটি ব্র্যান্ডের অংশ, সে বিষয়েও আমরা সতর্ক’।
 
বর্তমানে টনিকে সাজিদ রহমানের রয়েছে ১২ জনের কর্মীদল। আর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন দেশখ্যাত ডাক্তাররা।
 
টেলিনরের জন্য এটি প্রথমবারের মতো কোনো ডিজিটাল সেবা কার্যক্রম নয়। উন্নয়নশীল ও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এ টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বিস্তৃত পরিধির ব্যাংকিং সেবা। টেলিনর এর আগেও এমন নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা এশিয়ার কৃষি-শিল্পখাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সহায়তা করবে।
 
দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মাধ্যমে এ সেবা বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। এটি প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব। তাই টনিক এখানে কাজ করা শুরু করেছে, এটি অবাক করার মতো কোনো বিষয় নয়।
 
সাজিদ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের বাজার অনেক বড়। এ বাজারের চ্যালেঞ্জগুলো লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, এখানে স্টার্টআপের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছেন, যারা নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গড়ে তুলতে চান।   এ সম্পূর্ণ ব্যবস্থাই অনেক দ্রুত বড় হচ্ছে’।
 
টেলিনর হেলথ ছাড়াও ঢাকার ফাউন্ডার’স ইনস্টিটিউটের এ পরিচালক সাধারণ এমন উদ্যোগের পেছনে অনেক প্রতিশ্রুতির সম্ভাবনাও দেখতে পান।

**গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা ‘টনিক’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।