ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৫৪ বছরেও মমেক হাসপাতালে জুটেনি ক্যাথল্যাব মেশিন!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
৫৪ বছরেও মমেক হাসপাতালে জুটেনি ক্যাথল্যাব মেশিন! ছবি: অনিক খান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: হাসপাতালের বয়স ৫৪ বছর। এ দীর্ঘ পথচলায় ৫’শ শয্যা থেকে উন্নীত হয়েছে ৮’শ শয্যার হাসপাতালে।

নির্মিত হয়েছে আধুনিক একটি ভবন। অথচ হৃদরোগ বিভাগে জুটেনি রোগীদের এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পরানোর মেশিন ‘ক্যাথল্যাব’।  

দেশের পুরাতন সাতটি হাসপাতালেই হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য এ মেশিন থাকলেও শুধুমাত্র নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে! ফলে প্রতি বছরই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়লেও, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কপালে জুটছে না এ রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা।

বিশেষ করে ক্যাথল্যাবের অভাবে জটিল রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ অন্য কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।  

বছরের পর বছর এমন দৈন্যতা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলছে অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৪ কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান ভরসা এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ।  

সম্প্রতি সরেজমিনে মমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষরে সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন সব তথ্য।  

জানা যায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল। শুধু ময়মনসিংহ জেলা নয়, এ অঞ্চলের ৬ জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল এটি। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের একাংশের লোকও প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালেই আসেন।  

এখানকার হৃদরোগ বিভাগে সবচেয়ে বড় সমস্যা একটি ক্যাথল্যাব মেশিন না থাকা। অথচ এ মেশিনের মাধ্যমে হার্টে এনজিওগ্রাম করে রক্তনালীতে কোনো ব্লক থাকলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে রিং পরিয়ে দেওয়া সম্ভব।  

এতে করে মরণাপন্ন রোগীরও জীবন বেঁচে যেতে পারে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম খান।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০ শয্যার হৃদরোগ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রতি মাসে এ সংখ্যা ১২’শ থেকে ১৩’শ।  

অন্তত ক্যাথল্যাবের অভাবে এখানে প্রতি মাসেই অনেক রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং অনেক রোগীই প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এ বিভাগে রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক।  

কিন্তু ক্যাথল্যাবের মতো অত্যাধুনিক দামী মেশিন থাকলে অনেক রোগীকে আর ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হতো না। রোগীদের তাৎক্ষণিক জটিলতা এবং আকস্মিক মৃত্যু থেকে বাঁচানো সম্ভাবনা তৈরি হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাইফুল বারী।  

সূত্র জানায়, গত ৩ মাসে এ হৃদরোগ বিভাগে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. তুষারের ভাইসহ অনেক ভিআইপি রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।  

ক্যাথল্যাব থাকলে তাদের উন্নত চিকিৎসাসহ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতো, বলেন ওই বিভাগীয় প্রধান।  

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মোহাম্মদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু এরপরও এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ৫৪ বছরের ভাগ্যে শিঁকেও ছিড়েনি।  

মমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটেছে মাত্র মাসখানেক আগে। ভাগ্যাহত এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের রোগীদের এ নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে বরাদ্দ হয়েছিল একটি ক্যাথল্যাব মেশিনের।  

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটিও চলে গেছে অন্য একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে ময়মনসিংহবাসীর ভাগ্যে শিঁকেও ছিড়েনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হৃদরোগ বিভাগে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিতে হলে ক্যাথল্যাব মেশিন দরকার। এটি না থাকায় কোনো রোগীকে এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পরানো সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আশাকরছি অচিরেই আমরা একটি ক্যাথল্যাব মেশিন পাবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬ 
এমএএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।