ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই, তদন্ত কমিটি গঠন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই, তদন্ত কমিটি গঠন হাসপাতালে চিকিসাধীন স্বাধীনা আকতার শিলা- ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে স্বাধীনা আকতার শিলা (২২) নামে এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটে গজ রেখে সেলাই করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ না হওয়ায় আরও দুই দফা অস্ত্রোপচারে যেতে হয় তাকে।

তবে শেষ দফা অস্ত্রোপচারে অপসারণ করা হয়েছে পেটের গজ।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্যরা হলেন, মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরা ও ডা. তবির।

স্বাধীনা আকতার শিলা রাজশাহীর চারঘাট উজেলার নন্দনগাছি ফকিরপাড়া এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। শিলা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলের একটি ক্লিনিকে মাকসুদা বেগম নামে এক প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই দেন এক চিকিৎসক। ওই ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার ওই গৃহবধূকে ৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট

এদিকে, ভুল চিকিৎসাকে দায়ী করে শিলা বলেন, সিজারের পর থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর হতো। কাটা জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা হতো। আর কিছু খেলেই বমি হচ্ছিলো। তবে পেটের মধ্য থেকে গজ বের করার পর এখন শরীর অনেকটা ভালো বলে জানান তিনি।

শিলার বাবা ইদ্রিস আলী মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, ছয়বছর আগে তার চাচাতো ভাই আতাহার আলী মোল্লার ছেলে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে শিলার বিয়ে দেন। গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখে হাফিজুর-শিলা দম্পতির প্রথম সন্তান। তবে জন্মের তিনদিনের মাথায় মারা যায় সেই নবজাতক।

তিনি বলেন, দফায় দফায় অস্ত্রোপচারে সংকটাপন্ন অবস্থায় তার মেয়ে। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। ওষুধপত্র ও অস্ত্রোপচারের অর্থ জোগার করতে তাকে জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ী চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন শিলার বাবা।

ইদ্রিস আলী আরও জানান, ১৭ অক্টোবর প্রসব ব্যথা নিয়ে শিলাকে রাজশাহীর নওদাপাড়ার ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় সিজার করার সিদ্ধান্তের কথা জানান আবাসিক সার্জন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা নাজনীন রিতা। টাকা জমা দিলে সেদিনই সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করান চিকিৎসক।

তবে তিনদিনের মাথায় ২০ অক্টোবর দুপুরে হাসপাতালেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে ওই সময় জানান চিকিৎসক। পরে ওইদিন সন্ধ্যার আগেই শিলাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় ওই দিনই শিলাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রামেক হাসপাতালের স্ত্রীরোগ কনসালট্যান্ট ডা. মনোয়ারা বেগমের পরামর্শে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল শাখায় আরেক বার শিলার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। ওই রিপোর্টে প্রসূতির ডিম্বাশয়ে সংক্রামণের কথা জানানো হয়। ৩০ অক্টোবর সকালে রামেক হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিলার ডিম্বাশয় থেকে পুঁজ অপসারণ করেন ডা. মনোয়ারা বেগম। এরপর ৭ নভেম্বর রোগী সুস্থ বলে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক।

শিলার স্বামী হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মেনে ওষুধ চলছিলো। তারপরও দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শেষে বাড়িতে ফিরে আবারও প্রচণ্ড জ্বরসহ তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন শিলা। এছাড়া মূত্রনালি দিয়ে পুঁজ ও রক্ত যাওয়া শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ২৮ নভেম্বর শিলাকে ফের রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার তাকে আবারও আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন।

পরে রাজশাহী মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুইবার ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের লক্ষ্মীপুর শাখায় আরও একবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয় শিলার। প্রত্যেক রিপোর্টেই রোগীর ডিম্বাশয়ে গজ এবং সংক্রামণের কথা জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর রামেক হাসপাতালে তৃতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয় শিলার। এবার ডা. নাজমুন নাহার তারা অস্ত্রোপচার করে পেটে থেকে যাওয়া গজ ও পুঁজ অপসারণ করেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করে শিলার শারীরিক অবস্থা।

শিলার বিষয়টি জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা নাজনীন রিতা বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এছাড়া যোগাযাগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এসএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।