ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

চাকরি হারানো ৩৬ হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ কী?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
চাকরি হারানো ৩৬ হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ কী?

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য দালালদের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি বিক্রি করেছেন। শুক্রবার (১২ মে) ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশে এমনই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

কিন্তু, কীসের ভিত্তিতে ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলো, তা জানার আগ্রহ রাজ্যবাসীর।

রায়ের কপি অনুয়ায়ী জানা যায়, বিচারপতি লিখেছেন, ২০১৪ সালে টেট (টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীর প্যানেল, যারা ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন; সেসব প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পর্ষদের সাবেক সভাপতি-সহ কর্মকর্তাদের কাজ অনেকটা পাড়ার ক্লাবের মতো। আর ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, যাদের টাকা দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন অযোগ্যরা প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। সেই সব তথ্য-প্রমাণ পেতেই শুক্রবার বিচারপতির নির্দেশে একসাথে এত শিক্ষকের চাকরি যাওয়া কার্যত এক ঐতিহাসিক রায় বলে মনে করছেন অনেকে।

যদিও এই রায়ের পরই শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পাল এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিচারপতির নির্দেশের কপি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তার ভিত্তিতে ৪২ হাজার ৫০০ জনের নিয়োগ হয়। তারমধ্যে ৩৬ হাজারের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এরা সবাই অপ্রশিক্ষিত অর্থাৎ বিএড বা ডিএলএড করা ছিল না। সেই সময় নিয়োগের প্রথম শর্ত ছিল, বিএড বা ডিএলএড প্রশিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কিন্তু, দেখা যায় বহু প্রশিক্ষিত চাকরি পাননি। তাদের জায়গায় অপ্রশিক্ষিতরা চাকরি পেয়েছেন। যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তার রায়ে বলেছেন, চাকরিচ্যুতদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারাও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু, এই ৩৬ হাজারের মধ্যে যারা বিএড বা ডিএলএড করেননি তাদের কোনো সুযোগ নেই অর্থাৎ তাদের চাকরি বাতিল হবেই।

রায়ে দু’টি বিষয় রয়েছে। এক. তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। দুই. এই ৩৬ হাজার জন আরও চার মাস স্কুলে পড়াতে পারবেন। তবে তারা বেতন পাবেন পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন কাঠামো অনুযায়ী। পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে যে নতুন নিয়োগ হবে, তাতে ৩৬ হাজারের বাতিল তালিকাভুক্তরা অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু, যারা বিএড বা ডিএলএড করেননি তাদের কোনো সুযোগ নেই।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়োগে যত্রতত্র অনিয়মের ছাপ রয়েছে। ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, চাকরিপ্রার্থীদের অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়ার ভার যাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ জানতেন না কীভাবে নিতে হয় অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট। আর এই পুরো দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি দায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি।

অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট হলো, যেখানে টেস্ট নেওয়া হবে সেখানে একটা ব্ল্যাক বোর্ড, চক ও বইপত্র থাকবে। শিশুদের কীভাবে পড়ানো হবে, তা দেখানোর প্রক্রিয়া হলো অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট। বিচারপতির অভিযোগ, যে ঘরে অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়েছিল সেখানে এসব কিছু ছিল না। অনেককেই নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন।

রায়ের শেষাংশে বিচারপতি লিখেছেন, এই পুরো অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি হয়েছে পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিকের জন্য। তিনি সব নিয়ম জানতেন, তা সত্ত্বেও তিনি সব নিয়মই ভেঙেছেন। তাই রাজ্য সরকার যদি মনে করে, নতুন নিয়োগের পুরো ব্যয়ভার মানিকের কাছ থেকে নেবে, তা নিতে পারে। পাশাপাশি নিয়োগ মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এই দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও তথ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সৌজন্যে খুব শিগগিরই প্রকাশ্যে আসবে বলে মনে করছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ১৩ মে, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।